নীলফামারীর ডোমার উপজেলার মটুকপুর ভোকেশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট হওয়ার দ্বন্দ্বের জাঁতাকলে পড়েছে শিক্ষক-কর্মচারীসহ ২৬৩ শিক্ষার্থী। দ্বন্দ্বের কারণে পাঁচ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ আছে প্রতিষ্ঠানটির। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রশাসনিক কাজের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তির অভাবে ভেঙে পড়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা। পাঠদানের অচলাবস্থায় শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার দিন দিন কমে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে নবম শ্রেণিতে ১৯০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৫ জন এবং দশম শ্রেণিতে ৭৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ জনের উপস্থিত পাওয়া যায়। অন্যদিকে ২১ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে কাগজে-কলমে ১৯ জনের উপস্থিত দেখানো হলেও বিদ্যালয় চত্বরে পাওয়া যায় মাত্র ১১ জনকে।
অভিভাবকরা জানান, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এরফান ইসলাম ও আব্দুল মান্নানের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট হওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই থেকে তাঁদের মধ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত। ওই দুই শিক্ষকের পক্ষে-বিপক্ষে অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা অবস্থান নেয়ায় কেউ কারো কথা মানছেন না। এতে প্রশাসনিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ওই দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে গত এপ্রিল মাস থেকে বেতন-ভাতা তুলতে পারছেন না কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট এরফানুল ইসলাম ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত কারণে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান। তখন দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো. জাকারিয়া দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় তৃতীয় জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক আব্দুল মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেয় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এ অবস্থায় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্টের অব্যাহতি ও নতুন ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্টের নিয়োগ প্রসঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ এরফানুল ইসলামের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। দীর্ঘদিনেও এ সমস্যা নিরসন না হওয়ায় এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এরফান ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার পর ব্যবস্থাপনা কমিটি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। সেই থেকে আমি ওই দায়িত্ব পালন করে আসছি।’
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল বাতেন বলেন, ‘এরফান ইসলাম স্বেচ্ছায় ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট পদ ছেড়ে দেওয়ায় আব্দুল মান্নান ওই পদে যোগদান করেছেন।’
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা বলেন, ‘বোর্ডের ও মন্ত্রণালয়ের চিঠি অনুযায়ী আমি এরফান ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছি। কিন্তু আব্দুল মান্নান তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। এ কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিল-বেতন দেয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। মতামত পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’