বরিশালের মুলাদীতে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বন্ধ একটি স্কুল সরকারিকরণের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের তয়কা-টুমচর গ্রামের তয়কা কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের ২টি কক্ষও পরিত্যক্ত।
অথচ কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী দেখিয়ে একটি মহল স্কুলটিকে এবার সরকারিকরণের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে। শুধু তাই নয়, এ জন্য ধার করা ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে চলতি বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেয়ানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ৯০ এর দশকে জাগরনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন জমিতে বিদ্যালয়টি চালু করেন স্থানীয় দুই শিক্ষক। কিন্তু সরকারি কোনো অনুদান না পাওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে বিদ্যালয়ের ২টি কক্ষ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
এদিকে সরকার দেশের বিভিন্ন এলাকায় রেজিষ্টার্ড ও কমিউনিটি স্কুল সরকারিকরণ করায় সম্প্রতি তয়কা গ্রামের মোদাচ্ছের হোসেন নামে এক ব্যক্তি সেই সুযোগ নেয়ার পরিকল্পনা করেন। এ জন্য তিনি পাশ্ববর্তী উত্তর সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থী এনে তয়কা কমিউনিটি বিদ্যালয়ের নামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা দেয়াচ্ছেন।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে একটি বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ক্লাশ না হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা কীভাবে পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
ওই গ্রামের মৃত মোতালেব ভূইয়ার ছেলে মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, প্রায় দুই দশক আগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখার জন্য ২ জন শিক্ষক অনেক দৌড়ঝাঁপ করেন। তবে সরকারি অনুদান বা অর্থের অভাবে কয়েক দিনের মধ্যেই স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়।
সেই থেকে স্কুলটিতে আর ক্লাশ হয়নি, নেই কোনো শিক্ষার্থীও। উপজেলা শিক্ষা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় স্বঘোষিত শিক্ষক মোদাচ্ছের হোসেন ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে স্কুলটি সরকারিকরণের পাঁয়তারা করছেন।
তিনি আরও জানান, মোদাচ্ছের হোসেনের এই ফন্দি সম্প্রতি এলাকাবাসীর কাছে ফাঁস হয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর এলাকাবাসীর সঙ্গে পরামর্শ করে গত ১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোদাচ্ছের হোসেন জানান, উত্তর সেলিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাদ পড়া ৫ শিক্ষার্থীকে তয়কা কমিউনিটি বিদ্যালয়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্ধ থাকা পুরানো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তবে একটি পক্ষ বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে ষড়যন্ত্র করছে। শিশুদের পাঠদান করানো দোষের কিছু নয়। তা ভেবেই কমিউনিটি বিদ্যালয়টি চালু রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ক্লাস্টারের (ব্রজমোহন) দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আরিফ খান জানান, তয়কা কমিউনিটি বিদ্যালয় নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা নেই। বিষয়টি আজই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুলাদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ কোনো অনিয়ম বা অনিয়মের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।