২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পাওয়া এমপিওবঞ্চিত শিক্ষকদের ফরিয়াদ - দৈনিকশিক্ষা

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পাওয়া এমপিওবঞ্চিত শিক্ষকদের ফরিয়াদ

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

এমপিওভুক্ত ও নন এমপিও শিক্ষকদের অনেক কষ্টের কথা দৈনিক শিক্ষায় বহুবার লিখেছি। আজ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা মহামারির কারণে লেখালেখিতে মন নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে কেবল মৃত্যুর দুঃসংবাদ। প্রিয় স্বদেশেও মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। কখন এই মিছিল থামবে, কেউ বলতে পারে না। কখন কে মিছিলে শরিক হবে, তাও কেউ জানে না। তবু জীবন থেমে নেই। জীবন ও জীবিকার তাগিদে করোনার সাথে আপোস করে এগিয়ে যাবার প্রয়াস সর্বত্র পরিলক্ষিত। মানুষ সামাজিক জীব। একা ঘরে কয় দিন থাকতে পারে?  প্রত্যেক মানুষের একটা মুখ আছে। আছে একটি উদর। রাত পোহালেই মুখে কিছু দিতে হয। উদরকে শান্ত রাখা লাগে। তাই হাত পা গুটিয়ে কয়দিন ঘরে বসে থাকা যায় ? পৃথিবীর বহু দেশে লকডাউন উঠে যাচ্ছে। ইদানিং ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে করোনা পরিস্থতির আপাত কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় দিন দিন এর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। জানিনা, কতদিন করোনার সাথে লড়াই করে পৃথিবীর মানুষজনকে বেঁচে থাকতে হবে ? কখনো লড়াই আর কখনো আপোস করে বেঁচে থাকা ছাড়া মানুষের সামনে আপাত আর কোনো পথ নেই। সে পথেই এগিয়ে যেতে হবে।

করোনা মহামারি শুরুর দিকে বেসরকারি শিক্ষকদের অভাব অভিযোগ নিয়ে আমার লেখাগুলোতে কেউ কেউ তির্যক মন্তব্য করেছেন। কেন জানি শিক্ষকদের প্রতি একশ্রেণির মানুষের এলার্জি সবসময় একটু বেশি থাকে। এরা মনে করে, সরকার থেকে শিক্ষকেরা সব সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। শিক্ষকদের কোনো অভাব বা চাহিদা নেই। কিন্তু, এদেশের শিক্ষক সমাজ বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকগণ কী সুখে আছেন (!)  -সেটি অনেকেই জানেন না। আবার অনেকে জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। এটিই শিক্ষকদের জন্য সবচেয়ে দুঃখের বিষয়। শিক্ষকদের বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া দরকার। তা না হলে শিক্ষায় আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছা কোনদিনই সম্ভব হবে না।

আজ এ লেখায় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃত ও বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত যে সকল শিক্ষক এখন পর্যন্ত এমপিও থেকে বঞ্চিত রয়েছেন, তাদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এসব বঞ্চিত শিক্ষকগণ সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠানে বিধি মোতাবেক নিয়োগ লাভ করেও প্যাটার্ণ, বিষয়, শাখা কিংবা পদ সংক্রান্ত জটিলতায় এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। এর দায়ভার কার ?  কার দোষে এসব নিরীহ শিক্ষক আজ এতটি বছর ধরে বিনা বেতনে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন ? ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল। এই ৪-৫ বছরেও এসব এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকদের এমপিও পাবার বিষয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। তারা দারুণ দুশ্চিন্তা ও কষ্টের মধ্যে আছেন। বিশেষ করে করোনাকালীন এই দুঃসময়ে তাদের কষ্টের কোনো সীমা নেই। তারা কোথাও ঠাঁই পাচ্ছেন না। উপজেলা, জেলা, ডিডি, মাউশি, এনটিআরসিএ কেউ তাদের কথা কানে তুলছে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাদের ঠিকই খাটাচ্ছে। কিন্তু তাদের ভালো চোখে দেখছে না। 

এ সব শিক্ষকদের এমপিও না পাবার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান ও এনটিআরসিএ কিভাবে দায় এড়াবে? প্রতিষ্ঠান প্রধানের যদি প্যাটার্ণ, পদ ও পদ সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকে, তাহলে সেটা সত্যি সত্যি দুঃখজনক। প্যাটার্ণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে বিদ্যমান শুন্য পদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের এনটিআরসিএ বরাবর রিকুইজিশন প্রেরণ করা উচিত ছিল। এ ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ'র কী কোনো দায় নেই ? মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্যাটার্ণ, পদ ও বিষয় সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় যাচাই বাছাই করে এরপর নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রেরণ করা প্রয়োজন ছিলো। তা না করে এনটিআরসিএ চোখ বন্ধ করে সুপারিশ প্রেরণ করে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো না জেনে না বুঝে এসব শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে আজ তাদের মহা মুশকিলে ফেলে দিয়েছে। এসব শিক্ষক বিনা বেতনে পরিবার পরিজন নিয়ে গত ৪-৫ বছর ধরে সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিশেষ করে করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে তাদের অবস্থা একেবারে করুণ।

এনটিআরসিএ কর্তৃক দ্বিতীয় ধাপে সুপারিশকৃত অনুরুপ এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকদের সমন্বয়ের মাধ্যমে এমপিও দেবার কথা শোনা য়াচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগি কাজ হবে। কিন্তু প্রথম ধাপের সুপারিশকৃত অর্থাৎ ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ও নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিও বঞ্চিতদের বাদ দিয়ে কেন ?

যে করেই হোক এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশকৃত সকল এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকদের অনতি বিলম্বে এমপিও দেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করুণ। ২০১৬ সনের সুপারিশকৃত এমপিও বঞ্চিতদের সবার আগে দিন। কেননা, তারাই এনটিআরসিএ'র সুপারিশ সবার আগে পেয়েছিলেন। তাদের কষ্টে আল্লাহর আরশ ফেটে যাচ্ছে। হয়ত বা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে সুপারিশকৃত শিক্ষকের উপযোগি পদ সৃষ্টি করে দিন। না হয় অন্য প্রতিষ্ঠানে পদ খালি থাকলে সেখানে তাদের পদায়ন করে দিন। যে করেই হোক তাদের এমপিও দিন। সেই সাথে তাদের বকেয়া চাওয়াটাও মনে হয় অযৌক্তিক হবেনা।

লেখক : মুজম্মিল আলী, অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট। 

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040209293365479