২৩ হাজার স্কুল-মাদরাসায় ছোটদের মন্ত্রিসভা নির্বাচনে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস - দৈনিকশিক্ষা

২৩ হাজার স্কুল-মাদরাসায় ছোটদের মন্ত্রিসভা নির্বাচনে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এক নির্বাচনী উৎসবের মধ্য দিয়েই দেশের ২২ হাজার ৯২৬ মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসায় গঠন করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের মন্ত্রিসভা। অপরের মতে প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানো, ভর্তির হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ২৩ হাজার স্কুল-মাদরাসায় ছোটদের মন্ত্রিসভা নির্বাচনে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস সম্পৃক্ত করা আর শিশুদের মাঝে গণতন্ত্র চর্চার লক্ষ্য সামনে রেখে হয়েছে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন। কোন রকমের বিরোধ নয়, উৎসবের আমেজে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতেই শিক্ষার্থীরা ছাত্রসংসদের আদলে করে দেখাল স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন। এক কোটি ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯১৬ শিশু-কিশোর নির্বাচন করল তাদের পছন্দের ২২ হাজার ৯২৬ প্রধানমন্ত্রী আর এক লাখ ৮৩ হাজার ৪০৮ মন্ত্রী। 

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে দৈনিক শিক্ষার রিপোর্টাররা প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। সব প্রতিবেদনেই ফুটে উঠেছে উৎসাহের ছাপ। 

স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাড়িয়ে শিক্ষার্থীরা

শনিবার সকালে মতিঝিল সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সিদ্ধেশ্বরী স্কুল এ্যান্ড কলেজে খুদে শিক্ষার্থীদের স্কুল কেবিনেট নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। সঙ্গে ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন, নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ওসমান ভূঁইয়া প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে গণতন্ত্র চর্চা, নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ধারণা, পরমত সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তরিকতা তৈরি, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার রোধসহ নিজেদের মূল্যবোধ ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা প্রদানে স্কুল কেবিনেট নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে।

স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

তিনি আরও বলেন, আজ শিক্ষার্থীরা নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নেতা নির্বাচন করছে। সেই নেতার নির্দেশ মেনে চলছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। এতে ওসব ছাত্রছাত্রী দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে নিজের মূল্যবোধ তৈরিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও উন্নয়ন হচ্ছে। সব স্থানে দলনেতা মানতে হয়, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে সেই জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাচ্ছে। শিশুকাল থেকে গণতন্ত্রের চর্চা আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারছে। দীপু মনি বলেন, এ নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হবে তারা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে, আর যারা নির্বাচিত হবে না তারা মন খারাপ না করে বিজয়ীদের সঙ্গে থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে।

সকাল নয়টায় শুরু হয়ে বিরতিহীন ভোটগ্রহণ চলে দুপুর দুটো পর্যন্ত। বিকেলে বিজয়ীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। দুপুরে মতিঝিল সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণজুড়ে সাদাকালো ও রঙিন কাগজে হাতে লেখা পোস্টার ঝোলানো হয়েছে। সেসব পোস্টারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব পোস্টারে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেছে।

স্কুল মাঠে লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে একে একে ক্লাস রুমে গিয়ে বসানো ভোটবাক্সে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বেরিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। ভোট কক্ষে জাতীয় পর্যায়ের ভোটের মতোই পোলিং অফিসার, প্রার্থীদের এজেন্টরা উপস্থিত ছিল। তারা ভোটারদের সহায়তা করে। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খুদে শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করছে। 

রাজধানীর লালবাগের আবদুর রাজ্জাক দাখিল মাদরাসার শিশুদের উৎসবে শামিল হয়েছিলেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ওখানে দেখা যায় পুরো এলাকা হাতে লেখা পোস্টার, লিফলেটে ঠাসা। প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে ষষ্ঠ শ্রেণীর শিশুদের আনন্দ ছিল একটু বেশিই। এ রকম অভিজ্ঞতা ওদের জীবনে যে আর আসেনি।

তাই বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে সবাই। ভোট দেয়ার অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল অনেকে। যাদের ভোট দেয়া শেষ, তারা মেতে ওঠে আনন্দে। কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে স্লোগানে মাতিয়ে তোলে পুরো মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ।

রাজধানীর তেজগাঁও মডেল স্কুলের সামনে দেখা যায় শিশুদের মিছিল। ভেতরে প্রতিটি বুথের মুখে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন। শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বেও তৎপর শিক্ষার্থীরাই। নবম শ্রেণীর বালিকা শাখার ভোটকক্ষে দেখা গেল প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছে একই শ্রেণীর ছাত্রী নাজমা। পোলিং অফিসার হিসেবেও আছে দুজন। তারা ভোটারদের হাতে নিরাপত্তা চিহ্ন হিসেবে অমোচনীয় কালি লাগিয়ে দিচ্ছে। নির্বাচনে এই ক্লাসের দুই প্রার্থী। তাই তাদের পক্ষে রয়েছে দুজন এজেন্ট। তারাও পাশাপাশি বসা। পোলিং এজেন্ট সুলতানা বলছিল, নিজেদের ভোট তাই সুশৃঙ্খলভাবে সবাই ভোট দিচ্ছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না। এই সুযোগ করে দেয়ার জন্য শিশুরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাল।

ব্যানবেইসের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ওসমান ভূঁইয়া বলেন, শিশু-কিশোররা সারাদেশে অত্যন্ত সুন্দর উৎসবের মধ্য দিয়ে নির্বাচন করে ফেলল। নির্বাচন পরিচালনা ও তদারককারী এ প্রতিষ্ঠানে পরিচালক আরও জানান, সারাদেশ থেকেই ভাল সাড়া মিলেছে। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা নিয়েছে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিষয়টি। 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-১) চন্দ্র শেখর হালদার দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি শিশুকাল থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা, সহনশীলতা ও মূল্যবোধ তৈরির উদ্দেশ্যেই সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’ গঠন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তারাই এ দেশ গড়ে তুলবে, পরিচালনা করবে। তাই এখন থেকেই তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অন্যের মতের প্রতি সহনশীলতা চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ নয়, অন্যের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যেই তারা চেষ্টা করবে।

জানা যায়, এ বছর দেশের আট বিভাগ ও আট মহানগরের মোট ৫৫৯ উপজেলা/থানার ২২ হাজার ৯২৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৬ হাজার ৩৮৪ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছয় হাজার ৫৪২ দাখিল মাদ্রাসা। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক লাখ ৩১ হাজার ৭২ আর মাদ্রাসায় ৫২ হাজার ৩৩৬ পদে নির্বাচন হয়েছে।

নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯১৬। এর মধ্যে ছাত্রী ৬২ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩, যা মোট শিক্ষার্থীর ৫৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ছাত্রের সংখ্যা ৫৩ লাখ দুই হাজার ২৩৩। শিশুদের এই মন্ত্রিসভা এক বছর মেয়াদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তারা কাজ করবে।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল ভোটের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের এই নির্বাচন। ধীরে ধীরে তা ব্যাপক সফলতা  ও গ্রহণযোগ্যতা পায়। 

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040061473846436