২৯৯ কলেজ সরকারিকরণ: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ।। পর্ব ১ - দৈনিকশিক্ষা

২৯৯ কলেজ সরকারিকরণ: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ।। পর্ব ১

জহুরুল ইসলাম |

আজ এমন একটি সময়ে লেখাটি লিখছি যখন চতুর্থ বারের (টানা তৃতীয় বার) মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় ও একক সিদ্ধান্তে যেসব উপজেলায় সরকারি স্কুল-কলেজ নেই সেসব উপজেলায় একটি করে স্কুল ও একটি করে কলেজ সরকারি করে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে একটি মাইলফলক স্থাপন করেছেন। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁর কাছে চির কৃতজ্ঞ। এসব কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে আত্তীকরণের জন্য ইতোমধ্যেই সরকারি কলেজ শিক্ষক-কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮ জারি হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে সরকারিকরণের সুদীর্ঘ ৪০ বছরের ইতিহাস কলমের এক খোঁচাতেই ভেস্তে গেছে। সরকারিকরণের ৪০ বছরের  ইতিহাস এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রণীত বিধি শিক্ষক সমাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারকে উপহাসে পরিণত করেছে বলেই মনে হচ্ছে। এই সরকারিকরণে শুধু প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সরকারি হয়েছে; আর কিছুই হয়নি। 

এখন একটু দৃষ্টিপাত করব আত্তীকৃত হওয়ার ইতিহাসের দিকে। মহকুমা সদরে অবস্থিত বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের মাধ্যমেও সরকারি কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৮০ ক্যাডার কম্পোজিশন রুলস এর মাধ্যমে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার জন্ম হয়। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারটিতে ‘টিচার্স অ্যান্ড নন-টিচিং স্টাফ আব ন্যাশনালাইজড কলেজ (ডিরেক্টরেট পাবলিক ইন্সট্রাকশন) অ্যাবজারপশন’ রুলস ১৯৮১ অনুযায়ী আত্তীকৃত শিক্ষকগণ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ক্যাডার মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। 

১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তৎকালীন সরকার বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের প্রক্রিয়া গ্রহণ করায় নতুন করে ‘টিচার্স অ্যান্ড নন-টিচিং স্টাফ আব ন্যাশনালাইজড কলেজ (ডিরেক্টরেট পাবলিক ইন্সট্রাকশন) অ্যাবজারপশন রুলস ১৯৮৫’ এর খসড়া তৈরি করা হয়। তৈরিকৃত বিধি বাস্তবায়নে গড়িমসি করায় সুপ্রিম কোর্ট-এ একটি রিট করা হয়। ওই রিটে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগেও হেরে যায়। তখন আদালতের রায়ের আলোকে জাতীয়কৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা-১৯৯৮ তৈরি করে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। তখন বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ হলে শিক্ষক-কর্মচারীগণ এই বিধিমালা দ্বারা আত্তীকৃত হতেন এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই শিক্ষকরা ক্যাডার মর্যাদা পেতেন।

১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের বিধিমালা কার্যকর থাকাকালে আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে নন-ক্যাডার করার দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা জাহানারা বেগম সুপ্রিমকোর্টে একটি রিট করেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জবাব চায়। রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে তৎকালীন শিক্ষাসচিব কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ ও মহাপরিচালক নায়ার সুলতানা’র যৌথ স্বাক্ষরে লিখিত জবাব দেয়া হয়। এই জবাবের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে আত্তীকৃত শিক্ষকরা কীভাবে ক্যাডার মর্যাদা পেয়েছেন তার বিবরণসহ সরকারি কলেজ শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো নন-ক্যাডার পদ নেই এই মর্মে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এই রিটেও বাদী পক্ষ হেরে যান। 

১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী যেসব জেলা শহরে সরকারি মহিলা কলেজ নেই এমন জেলা সদরে অবস্থিত ১৮টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই উদ্যোগের পরবর্তী সময়ে বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের আত্তীকরণের জন্য জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০ প্রণয়ন করে। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের  ২৭ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এই বিধিমালাতেও আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে ক্যাডার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এই বিধিমালার মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৪৬টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করেছেন এবং ওই সমস্ত কলেজ শিক্ষকদেরকে ক্যাডার মর্যাদা দিয়ে আত্তীকরণ করেছেন। 

উল্লেখ্য, রাজধানীর কালাচাঁদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এ মো. ওয়াকিল উদ্দিন রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটের রায়ে বিচারপতি জিনাত আরা ও এ.কে.এম. শহিদুল হক এর দ্বৈত বেঞ্চ ৮ দফা নির্দেশনা দেন। যেখানে ১নং নির্দেশনার মাধ্যমে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদেরকে ক্যাডার মর্যাদা দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। 

চলবে

লেখক: সভাপতি, সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) কেন্দ্রীয় কমিটি। 

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070710182189941