২৯৯ কলেজ সরকারিকরণ: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ।। ২য় পর্ব - দৈনিকশিক্ষা

২৯৯ কলেজ সরকারিকরণ: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ।। ২য় পর্ব

জহুরুল ইসলাম |

১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি জেলা শহরে একটি করে মহিলা কলেজ সরকারিকরণ করায় আত্তীকরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ক্যাডারের কতিপয় সদস্য। ফের জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ ২০০০ বিধিমালা তৈরি করা হয়। 

২০০০ বিধি অনুসারে আত্তীকরণে সমস্যা দেখা দিলে ২০০০ বিধির ৯ ধারায় ৩ উপধারার পর ৪ উপধারা সংযোজন করা হয়। এর মাধ্যমে ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ক্যাডার, প্রভাষক হিসেবে আত্তীকরণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৪৬টি কলেজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্যাডার মর্যাদাসহ শিক্ষকদেরকে আত্তীকরণ করেছেন। 

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার পূর্বের মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন তিন ধাপে সরকারি কলেজ বিহীন উপজেলায় একটি করে কলেজ সরকারিকরণের জন্য নির্বাচিত করেন। তিন ধাপের সর্বশেষ ধাপটির নির্বাচনের তারিখ ছিল ১৭ আগস্ট ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ। সে অনুযায়ী জাতীয়করণের লক্ষ্যে নিয়োগ, স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ও অর্থব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ২৮ আগস্ট ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে দলিল হস্তান্তরের জন্য ২০ এপ্রিল ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে পত্রাদেশ জারি করে। এ পত্রাদেশের ভিত্তিতে কলেজ পরিচালনা পরিষদ স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে  দানপত্র দলিল মূলে হস্তান্তর করা হয়।

জাতীয়করণ বা সরকারিকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থা একদিন জাতীয়করণ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সফলতা কামনা করছি। 

জাতীয়করণ বা সরকারিকরণের দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত যে সমস্ত বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ হয়েছে তার বেশির ভাগই সরকারি করার ঘোষণার দিন থেকে সরকারি করা হয়েছে। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীদেরকেও ঘোষণার দিন থেকেই সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: ২৯৯ কলেজ সরকারিকরণ: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ।। পর্ব ১

 ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৮টি মহিলা কলেজ সরকারি হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু কলেজ স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করবে বলে যেদিন কলেজ পরিচালনা পরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সেদিন থেকে সরকারিরকণ করা হয়েছে। আবার কিছু কলেজ যেদিন কলেজের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে হস্তান্তর করার অঙ্গীকারনামা জমা দিয়েছে সেদিন থেকে সরকারিকরণ করা হয়েছে। ২৯৬টি কলেজকে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রায় এক বছর পর সরকারিকরণ করা হয়েছে। এজন্য ২৯৬টি কলেজের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সরকারিকরণের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমলতান্ত্রিক জটিলতার জন্য আমরা প্রায় ১ বছর আর্থিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আইনের দৃষ্টিতে আমরা কি সংক্ষুব্ধ নই? 

৯০ দশকে সরকারি হওয়া এক কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেনের পক্ষে এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের আত্তীকরণ বিধিমালা তৈরি করা হয় এবং তার ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়ন করা হয়। এ বিধিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং কলেজ জাতীকরণ করায় পূর্বে তিনি যে পদে কর্মরত ছিলেন সেই পদে বা সমমানের পদে অস্থায়ী নিয়োগ পেতেন। যখন ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৮টি মহিলা কলেজ সরকারি হয় তখন জটিলতা দেখা দেওয়ায় তড়িঘড়ি করে ২০০০ বিধি তৈরি করা হয়। এ ১৮টি মহিলা কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের ২০০০ বিধি অনুসারে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগ প্রদানের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আত্তীকৃত শিক্ষকরা রিট করলে তাদেরকে সরকারিকরণের কার্যক্রম চালু থাকাকালীন বিধিতে অর্থাৎ ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের বিধিতে থাকা সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করে রায় দেয় হাইকোর্ট। 

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮ জারি করা হয়। ১৩ আগস্ট ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ২৭১টি কলেজ সরকারিকরণের আদেশ জারি করা হয়। তিন ধাপে সর্বমোট ২৯৬টি কলেজ সরকারিকরণের আদেশ জারি করা হয়। সরকারি কলেজ বিহীন উপজেলাসমূহে একটি করে কলেজ সরকারিকরণের অংশ হিসেবে সর্বমোট ৩০১টি কলেজ নির্বাচন করা হয়। এরমধ্যে নেত্রকোণা জেলার সুসং মহাবিদ্যালয়, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি কলেজ ও সুনামগঞ্জ জেলার পাগলা মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজকে ২০০০ বিধি অনুযায়ী সরকারিকরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষকদেরকে ক্যাডার প্রভাষক পদে আত্তীকরণ করা হয়েছে। অন্য ২৯৬টি কলেজকে করা হচ্ছে ২০১৮ সালে প্রণীত বিধি অনুযায়ী। এটা কি অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়? ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের প্রণীত বিধির অসঙ্গতিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা উচিত ছিল অনেক আগেই। কিন্তু আমরা তা পারিনি।

চলবে

লেখক: সভাপতি, সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) কেন্দ্রীয় কমিটি

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076460838317871