২৯৯ কলেজ সরকারিকরণ: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ।। ৩য় পর্ব - দৈনিকশিক্ষা

২৯৯ কলেজ সরকারিকরণ: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ।। ৩য় পর্ব

জহুরুল ইসলাম |

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের প্রণীত বিধিতে পদ স্থানান্তরের কথা বলা হলেও ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বিত পদ সৃজনের নির্দেশ জারি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা জেলার চারটি কলেজকে নিয়ে একটি পাইলটিং চলছে। এই বিধিতে ক্যাডারভুক্তির কথা বলা থাকলেও সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। প্রথমে একবার নন-ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দিবে পরে ক্যাডার প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে এ উদ্দেশ্যে প্রণীত বিধি অনুযায়ী ক্যাডার প্রভাষক পদে আবার নিয়োগলাভের জন্য    পাবলিক সার্ভিস কমিশন সুপারিশ করবে। নিয়োগ পত্রাদেশ পেয়ে যোগদান করার দিন থেকে ক্যাডারভুক্তি কার্যকর হবে। কবে বিধি হবে আর কবে নিয়োগ হবে তা পুরোপুরি অনিশ্চিত। 

এ বিধিতে অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদেরকে সরকারিকরণের দিন থেকে বিদ্যমান জাতীয় বেতন স্কেলের সংশ্লিষ্ট গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে স্ব-স্ব পদের বেতন-ভাতা প্রাপ্য হবেন। আমরা যে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করলাম তার কোনো মূল্য নেই। আমরা বেসরকারি যে চাকরিটি করতাম তা অবসর ও কল্যাণ এর অর্থ পাওয়ার চাকরি।
 
এই বিধিতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অথবা আত্তীকৃত শিক্ষক ও কর্মচারীদের চাকরি বদলি যোগ্য হবে না। যেখানে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ ও বর্তমান এমপিও নীতিমালা ২০১৮ তে বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরিকে বদলিযোগ্য বলা হয়েছে। কিন্তু এই বিধিতে সরকারি চাকরিকে বদলি অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে! বিধিতে আরো বলা হয়েছে, সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের পদোন্নতিযোগ্য স্থানান্তরিত পদসমূহে সংশ্লিষ্ট কলেজে কর্মরত আত্তীকৃত শিক্ষক ও কর্মচারী পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজ সরকারিকরণের পূর্বে, পদভিত্তিক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে, সরকার নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে পদোন্নতি প্রদান করা যাবে।
 
সরকারিকৃত কোনো কলেজে কোনো বিষয়ের শিক্ষকের স্থানান্তরিত কোনো পদ শূন্য হলে, তা সংশ্লিষ্ট কলেজের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তাৎক্ষণিক বা ভবিষ্যৎ পদোন্নতিযোগ্য আত্তীকৃত শিক্ষকগণের মধ্য হতে পূরণ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ফিডার পদে তাৎক্ষণিক বা ভবিষ্যতে পদোন্নতিযোগ্য আত্তীকৃত কোনো শিক্ষক ওই কলেজে না থাকলে, ওই পদ শিক্ষা ক্যাডারের পদ হিসাবে ওই ক্যাডারের সদস্যগণের মধ্য হতে পূরণ করা যাবে। সরকারিকৃত কোনো কলেজে কর্মচারীর স্থানান্তরিত কোনো পদ শূন্য হলে তা সংশ্লিষ্ট কলেজের তাৎক্ষণিক বা ভবিষ্যতে পদোন্নতিযোগ্য আত্তীকৃত কর্মচারীগণের মধ্যে হতে পূরণ করতে হবে।
 
তবে শর্ত থাকে যে, তাৎক্ষণিক বা ভবিষ্যতে পদোন্নতিযোগ্য আত্তীকৃত কোনো কর্মচারী উক্ত কলেজের না থাকিলে পদটি শূন্য বিবেচিত হবে এবং তা প্রচলিত সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণ করে পূরণ করা যাবে।
 
কার্যকর চাকরিকাল-সরকারিকৃত কলেজে আত্তীকৃত কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী সংশ্লিষ্ট কলেজ সরকারিকরণের পূর্ব পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ওই কলেজে সর্বমোট যে সময়কাল চাকরি করিবেন, সেই চাকরিকালের অর্ধেক সময় সংশ্লিষ্ট বা কর্মচারীর কার্যকর চাকরিকাল হিসাবে গণ্য হবে। সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের কার্যকর চাকরিকাল কেবল তাদের পেনশন ও ছুটির জন্য গণনাযোগ্য হবে। সেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কার্যকর চাকরিকাল ৫০ শতাংশ গণনা করার বিধান সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, বৈষম্যমূলক ও অমানবিক। বৈষম্যমূলক ও অমানবিক বলার কারণ হলো, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাকরি ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অধিকতর আইনি কাঠামো দ্বারা সুরক্ষিত; যা পূর্বে ছিল না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ এখন জাতীয় রাজস্ব বাজেট, জাতীয় বেতনস্কেল, জাতীয় বেতন কোডের অধীনে এমপিও শিট ও সরকার প্রদত্ত সার্ভিস ইনডেক্স নং এর মাধ্যমে শতভাগ সরকারি বেতনভুক্ত চাকরিজীবী। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বিধি-বিধান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান, কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ১৯৯০, কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা-১৯৯৯, অবসর সুবিধা আইন-২০০২, অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা-২০০৫ ইত্যাদি দ্বারা তাদের চাকরি নিয়ন্ত্রিত। শুধু তাই নয় এমপিওশিট এবং ডিজিতে বা ব্যানবেইসে শিক্ষকতথ্য সার্ভার দ্বারা তাদের কার্যকর চাকরিকাল এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণযোগ্য।

রেফারেন্স হিসেবে অবসর সুবিধা আইন-২০০২ এর অধীনে প্রণীত এসআরও ৮ জানুয়ারি ২০০৫ এর উপবিধি ২ (চ) তে এমপিওভুক্ত কার্যকর চাকরিকালের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- কার্যকর চাকরিকাল অর্থ মোট চাকরিকাল হতে অসাধারণ ছুটি, কর্তব্যকাল হিসাবে গণ্য হয় নাই এমন সাময়িক বরখাস্তকাল, এমপিও বহির্ভূত চাকরিকাল, অননুমোদিত অনুপস্থিতি ও চাকরির বিরতি ব্যতীত অবশিষ্ট চাকরিকাল। 

আরও পড়ুন: ২৯৯ কলেজ সরকারিকরণ: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ।। ২য় পর্ব

                        ২৯৯ কলেজ সরকারিকরণ: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা ।। পর্ব ১

একই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত দুই ‘এসআরও’তে দুই ধরনের কার্যকর চাকরিকালের সংজ্ঞা প্রদান অযৌক্তিক ও সাংঘর্ষিক। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প হতে রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সময় সংশিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ কার্যকর চাকরিকাল গণনার বিধান রয়েছে। তাহলে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের বেলায় কেন বৈষম্য?

বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের বেতন এখন আয়করের আওতায় আনা হয়েছে। আয়কর নেয়ার সময় ১২ মাস হিসাব করে নেয়া হয়। কিন্তু চাকরিকাল গণনা করার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ গণনা করার প্রবিধান প্রহসনমূলক। বেসরকারি কলেজে শতভাগ কার্যকর চাকরিকাল গণনা করেই ডিজি অফিস বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের প্রমোশন তথা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারী, সিনিয়র প্রভাষক পদে পদোন্নতি ও বেতন স্কেল প্রদান করে থাকেন। তাই ৫০ শতাংশ কার্যকর চাকরিকাল কর্তন অযৌক্তিক, অমানবিক, বৈষম্যমূলক ও আইনবহির্ভূত। 

এই বিধিমালায় সংশ্লিষ্ট জাতীয়কৃত কলেজের চাকরিকাল গণনা করা হয়। পূর্ববর্তী এক বা একাধিক কলেজের অভিজ্ঞতা বা চাকরিকাল গণনার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন সরকারি ও বেসরকারি উভয় কলেজের ক্ষেত্রেই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সরকারি কলেজে বদলি হয় প্রমোশনের কারণে এবং বেসরকারি কলেজে বদলি হয় পুনঃনিয়োগের মাধ্যমে। তাই পূর্ববর্তী এক বা একাধিক কলেজের অভিজ্ঞতা তথা কার্যকর চাকরিকাল গণনা না করা হলে অনেক শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 

লেখক: সভাপতি, সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) কেন্দ্রীয় কমিটি

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077152252197266