বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক কাঠামো থেকে শুরু করে সংবিধি, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা, বাজেটসহ সবকিছুই অনুমোদন দেয় এ পর্ষদ। যদিও খোদ ট্রাস্টি বোর্ড গঠনেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। আইনে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত সদস্য নিয়ে গঠন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্টি বোর্ড। বুধবার (২৭ নভেম্বর) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, পার্বত্য অঞ্চলের বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় ও বগুড়ার পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের ক্ষেত্রে নয়টি শর্ত দেয়া হয়েছে। এর প্রথমটিই বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সংক্রান্ত। আইনটির ৬ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার উদ্দেশ্যে অনধিক ২১ কিন্তু অন্যূন ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন করতে হবে।’ কিন্তু এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়েই বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সংখ্যা একুশের বেশি।
ট্রাস্টি বোর্ডে সীমার অধিক সদস্য যোগ করাকে আইনের লঙ্ঘন বলছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, অনুমোদনের সময় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সংখ্যা আইনের সীমার মধ্যেই ছিল। অন্যথায় অনুমোদন পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে অনুমোদন লাভের পর তারা নিজেদের ইচ্ছামতো অতিরিক্ত সদস্য যোগ করেছে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ড. মো. মহিবুল আহসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্টিজে ২১-এর অধিক সদস্য থাকার সুযোগ নেই। যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এর অতিরিক্ত সদস্য ট্রাস্টি বোর্ডে যোগ করে, সেটি আইনের ব্যত্যয়।’
চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজে বর্তমানে সদস্য রয়েছেন ২৫ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, ‘অনুমোদনের সময় সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। পরবর্তী সময়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে যোগ করার কারণে বোর্ডের আকার বড় হয়েছে।’
বান্দরবান শিক্ষা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের মধ্যে এ সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গত বছর অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর উশৈসিং। বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদনের সময় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য দেখানো হয়েছে ২১। যদিও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বলছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সংখ্যা ২৮।
ট্রাস্টি বোর্ডে আইনের সীমার অতিরিক্ত সদস্য রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব মো. নুরুল আবছার। তিনি বলেন, আমাদের ট্রাস্টি বোর্ডে সদস্য সংখ্যা ২১। তবে ওয়েবসাইটে ভুল করে ২৮ জনের নাম দেয়া হতে পারে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। এখন এটি চেক করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পর পরই অনিয়মে জড়ায় বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরের শেষের দিকে চারটি প্রোগ্রাম নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ও বিজ্ঞাপনে আটটি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ অনিয়ম নজরে এলে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসি। ওই সময়ই বিষয়টি ভুলবশত ঘটেছে বলে ইউজিসিকে জানায় বান্দরবানের এ বিশ্ববিদ্যালয়।
বগুড়ার পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সংখ্যা ২২। এর মধ্যে বেশির ভাগই ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের সদস্য।
এর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মূলত ২১ জন সদস্য নিয়েই ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্যকে বোর্ডে রাখতে হবে, তাই একজন সদস্য বেড়ে গেছে।’ যদিও ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, উপাচার্যসহ ট্রাস্টি বোর্ডে ২১ জনের বেশি সদস্য রাখার সুযোগ নেই।