৩৪ শিক্ষার্থীর জীবন থেকে হারিয়ে গেল একটি বছর - দৈনিকশিক্ষা

রাবির অধীন ইনস্টিটিউটের প্রতারণা৩৪ শিক্ষার্থীর জীবন থেকে হারিয়ে গেল একটি বছর

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনস্থ ইউনাইটেড টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) কোর্সে ভর্তি হয়েও ৩৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারছেন। গত ২৭ জুন থেকে রাবি অধিনস্থ অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা শুরু হলেও ওই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা করেনি ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে, তারা (শিক্ষক-কর্মকর্তারা) কিছু জানেন না বলে ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। শিক্ষার্থীরা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে শিক্ষার্থীরা।

তবে অভিযোগ উঠেছে, এমন সমস্যা দীর্ঘ দিনের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দৈনিক শিক্ষাকে জানান, ভর্তি বা টাকা পয়সার বিষয়ে সমস্যা হলে ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান থাকে না। । চিকিৎসাসহ নানা কারণ দেখিয়ে তখন তিনি দেশের বাইরে চলে যান।

সরেজমিনে শনিবার (১৩ জুলাই) ইনস্টিটিউটেতে গেলে ইনস্টিটিউটের রিসিপশনিস্ট খালেদা ফেরদৌস নিপা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, ইনস্টি টিউটের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান চিকিৎসার জন্য ভারতে রয়েছেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ভারতে থাকা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দেন নিপা। 

এ সময় মেহেদী হাসান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, প্রতি বছর ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে ৯ লাখ টাকা দিতে হয়। এ বছর টাকা দিতে দেরি হওয়ায় রেজিস্ট্রেশন হয়নি। 
তাহলে শিক্ষার্থীদের থেকে নেয়া ৪০ হাজার টাকা ফেরতের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ২ মাস সময় লাগবে টাকা ফেরত দিতে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, টাকা ফেরত পাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা সাধারণ ডায়েরি করেছেন। 

এর আগে গত ২ জুলাই ভুক্তভোগীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের দপ্তরে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ইনস্টিটিউট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। ফলে তারা ইনস্টিটিউটে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ভর্তি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। তাদের পরীক্ষা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। 

ইউনাইটেড ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে ৮ জন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই)  বিভাগে ৭ জন ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ১৫ জন ভর্তি হয়েছিল। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ ১০ হাজার, সেমিস্টার ফি বাবদ ১৮ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৬ হাজারসহ প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। নিয়মিত ক্লাসও নেয়া হয়।

অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক দপ্তরে কোনো টাকা জমা দেয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় তাদের নামে কোনো প্রবেশপত্রও ইস্যু করেনি রাবি কর্তৃপক্ষ। 

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শামিউল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আমরা ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন এবং পরীক্ষা ফি বাবদ প্রায় ৪০ হাজার করে টাকা দিয়েছি। নিয়মিত ক্লাসও করেছি। এখন শুনছি আমাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কোনো নামও নেই। ফলে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগও নেই। 

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আমরা ইনস্টিটিউটে গিয়ে টাকা ফেরত চেয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভর্তির সময়ে নেয়া আমাদের এইচএসসির সার্টিফিকেট ও মার্কশিট ফেরত দিয়েছে। কোনো টাকা ফেরত দেয়নি। ইনস্টিটিউটের এমডি দেশেও নেই বলে জানিয়েছে।

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো. তায়েব ফারাজি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়রিং বিভাগের মারুফ হাসানও একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষার ফিস বাবদ জমা দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিচ্ছে। তবে আদৌ টাকা ফেরত পাবেন কিনা তা বুঝতে পারছেন না তারা।

ইনস্টিটিউটের রিসিপশনিস্ট খালেদা ফেরদৌস নিপা জানান, ‘ইনস্টিটিউটের এমডি মেহেদী হাসান দেশে নেই। তিনি আসলে কথা বলতে হবে।’ শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়া এবং টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। 

রাবির কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক এম. মজিবুর রহমান বলেন, ‘ওই ইনস্টিটিউট গত তিন বছর বিএসসি শাখার কোনো নবায়ন ফি জমা দেয়নি। তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ফলে তাদের পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা ইউনাইটেড ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। শীঘ্রই তাদের অনুমোদন বাতিল করা হবে।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072400569915771