৩৯তম বিশেষ (স্বাস্থ্য) বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪ হাজার ৪৪৩ জন চিকিৎসক একযোগে যোগদান করেছেন। রোববার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাদের বরণ করে নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যখাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। গ্রামে বাস করা দেশের ৮০ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে নবীন চিকিৎসকদের কাজ করতে হবে। চিকিৎসাসেবার মতো মহান কাজ আর হয় না। কিন্তু সেই সেবার কাজটি কেবল শহরের মানুষ পেলেই চলবে না, সেই সেবা পৌঁছে দিতে হবে গ্রামে থাকা দেশের ৮০ ভাগ মানুষের দোড়গোড়ায়। তখনই আমাদের স্বাস্থ্যসেবার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের বিরাট অর্জন। স্বাস্থ্যখাতে প্রধানমন্ত্রীর অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাউথ সাউথ ও ভ্যাকসিন পুরস্কার পেয়েছেন। এটা আমাদের বিরাট অর্জন। তিনি আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছে। শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, পোলিওমুক্ত দেশ, ১০০ মেডিক্যাল কলেজ, ১৫০ নার্সিং কলেজ-ইনস্টিটিউট, চার মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, ক্যানসার ইনস্টিটিউটসহ বহু প্রতিষ্ঠান এ সরকার করেছে। বর্তমানে ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। ৯৮ ভাগ ওষুধই দেশের চাহিদা পূরণ করছে। বাইপাস সার্জারি হচ্ছে। কিডনি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে একটি আইন পাস হয়েছে, যদি মৃত ব্যক্তির আত্মীয় অনুমোদন দেয়, তাহলে মৃত ব্যক্তির কিডনি দান করা যাবে। কিডনির কোনো ব্যবসা করা যাবে না। এ আইন বলবৎ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে, বিদ্যুৎখাতে, সড়ক বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তিখাতে ব্যাপক উন্নয়ন তুলে ধরে নবনিয়োগপ্রাপ্ত নবীন চিকিৎসকদের দেশের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাবার নির্দেশনা দেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসহায়তা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানে সহকারী সার্জনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ৩৯তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডরের নবনিয়োগপ্রাপ্ত চিকিত্সকদের নিয়োগ পরীক্ষায় মেধাক্রমে প্রথম ডা. নীলিমা ইয়াসমিন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন ডা. মাহফুজ হাসান। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানে মোট ৪ হাজার ৪৪৩ জন নতুন সহকারী সার্জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন যোগদান করেন।
এর আগে, গত ১৯ নভেম্বর ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে ৪ হাজার ৪৪৩ জনকে স্বাস্থ্য ক্যাডারে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সহকারী সার্জন পদে ৪ হাজার ২০৩ জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ২৪০ জন চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ১০ এপ্রিল ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের আবেদন কার্যক্রম শুরু হয়, শেষ হয় ৩০ এপ্রিল। মোট ৩৯ হাজার ৯৫৪ জন প্রার্থী এ বিশেষ বিসিএসে আবেদন করেন। ওই বছরের ৩ আগস্ট এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়, এতে অংশ নেন ৩৭ হাজার ৫৮৩ জন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মোট ১৩ হাজার ৭৫০ জন চিকিৎসক। চূড়ান্ত ফলাফলে ৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
নিয়োগ পেলেন আরও ১৬৮ জন চিকিৎসক
৩৯তম বিশেষ বিসিএসে আরও ১৬৮ জন চিকিৎসককে স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নব নিয়োগ অধিশাখা থেকে এ নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। ১৬৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে সহকারী সার্জন পদে ১৬৫ জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে তিন জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশের পর গত ১৯ নভেম্বর এই বিসিএসে ৪ হাজার ৪৪৩ জন চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। নিয়োগপ্রাপ্তদের আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় নির্দেশিত বা পদায়িত কার্যালয়ে যোগদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী কোনো নির্দেশ না পেলে উল্লেখিত তারিখেই তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগদান করবেন। নির্ধারিত তারিখে চাকরিতে যোগদান না করলে তিনি চাকরিতে যোগদান করতে সম্মত নন বলে ধরে নেয়া হবে এবং এ নিয়োগপত্র বাতিল হয়ে যাবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।