সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ পেয়েও ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) মুক্তিযোদ্ধা কোটার ১০৪ প্রার্থী চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। নির্ধারিত সময়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ছাড়পত্র না মেলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন উবায়দুল্লাহ বাদল।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সোমবার তাদের ৩২ জনের তথ্য-উপাত্ত পুনরায় যাচাই-বাছাই শেষে চাকরিতে যোগদানের অনুমতি (ছাড়পত্র) দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জামুকা। আগামীকাল জামুকা কার্যালয়ে বাকি ৭২ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে।
তবে পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত সবাইকেই চাকরিতে যোগদানের ছাড়পত্র দেয়া হতে পারে। কোনো প্রার্থীর তথ্য প্রমাণাদির ঘাটতি থাকলে প্রয়োজনে মুচলেকা নিয়ে ছাড়পত্র দেয়া হতে পারে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, সোমবার জামুকা কার্যালয়ে ৩৯তম বিসিএসে পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত ৩২ প্রার্থীর অভিভাবকদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এতে জামুকার সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক সচিব রশিদুল আলম, মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীরপ্রতীকসহ প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাতে ৩২ জনের মধ্যে ২৮ জনের কাগজপত্র সঠিক থাকায় তাদের ছাড়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বাকি ৪ জনের বেশ কিছু সমস্যা থাকায় তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামুকার এক সদস্য বলেন, যেহেতু এটিই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিতে শেষ সুযোগ, তাই বিষয়টি একটু শিথিল করে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত প্রায় সবারই কোনো কোনো মুক্তিযোদ্ধার সনদ রয়েছে।
তারা সরকারি ভাতাও পাচ্ছেন। তাই এদের ব্যাপারে জামুকা মোটামুটি সহনশীল। কিছু প্রার্থীর উপজেলায় এখনও যাচাই-বাছাই কার্যক্রম হয়নি। তাদেরসহ টুকটাক কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে প্রয়োজনে মুচলেকা নিয়ে সবাইকে ছাড়পত্র দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ পেয়েও ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) মুক্তিযোদ্ধা কোটার ১০৪ প্রার্থী যোগ দিতে পারেননি। তাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে এ সংক্রান্ত উপ-কমিটি প্রতিবেদন দিলেও তা আমলে নেয়নি জামুকা।
গত ১০ ডিসেম্বর জামুকার বৈঠকে নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে সংস্থার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হবে। সোমবার প্রথম দফা সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। ৮ জানুয়ারি আবারও যাচাই-বাছাই (শুনানি) হবে।
এর আগে তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গত ১ অক্টোবর জামুকার সদস্য মোতাহার হোসেন এমপিকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের উপকমিটি গঠন করে জামুকা। অন্যরা হলেন জামুকার সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার এমপি ও মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীরপ্রতীক।
কমিটি দু’দফায় তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রায় সবাইকে ছাড়পত্র দেয়ার সুপারিশ করে। এতেই মূলত বিপত্তি দেখা দেয়। কারণ জামুকা কর্তৃক গঠিত উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন থেকে তিন ধরনের খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
‘ক’ তালিকা হচ্ছে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত তালিকা। যাদেরকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে মনে করা হয়। ‘খ’ হচ্ছে দ্বিধাবিভক্ত মতের ভিত্তিতে করা তালিকা। অর্থাৎ কমিটির একটি অংশ সায় দিলেও অপর অংশ বিরোধিতা করেছে। ‘গ’ হচ্ছে কমিটির নামঞ্জুর করা তালিকা।
এই তালিকার আবেদনকারীদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে স্বীকারই করা হয় না। কিন্তু পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে ‘গ’ তালিকার ৮ জন, কোনো তালিকায় নাম নেই এমন সংখ্যাই ৩৪, জামুকায় কোনো প্রতিবেদন নেই এমন সংখ্যা ২৭। তাদের কিসের ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে জামুকা।
এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয় নতুন করে ৬ ও ৮ জানুয়ারি তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। জানা গেছে, পিএসসি ৪ হাজার ৭৯২ প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করে ৩০ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়।
পরে ২০ নভেম্বর ৪ হাজার ৪৪৩ জন এবং ৮ ডিসেম্বর ১৬৮ জনসহ মোট ৪ হাজার ৬১১ জনকে নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু ঝুলে যায় বাকি ১৮১ জনের ভাগ্য। এর মধ্যে বেশিরভাগই মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থী।