উৎপাদন বাড়াতে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বুধবার (১৪ অক্টোবর) থেকেই ইলিশ ধরা বন্ধ হয়েছে। বুধবার প্রথম প্রহর থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, কেনা-বেচা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতিবছরের মতো এ বছরও ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলেরা। যদিও সঠিক সময়ে প্রণোদনার চাল প্রাপ্তি এবং ঋণের কিস্তি মকুব করার দাবি জানিয়েছেন তারা। আর ৩ সপ্তাহের এ বিরতিতে ৭০ ভাগ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২০ (১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর) উপলক্ষে ২২ দিন ইলিশ ধরা-বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের নদ-নদী মোহনা ও সাগর থেকে আহরিত হয়। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার অনেক সুন্দর ও বড় আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। যা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী কার্যক্রমের কারণে। ইলিশ এক সময় দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছিল, এখন তা মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে। বাংলাদেশে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ ধরা সস্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় মা ইলিশ বা জাটকা ধরার আশঙ্কা আছে, সেসব এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।
তিনি আরও জানান, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ও এ সময়ে জেলেদের সহায়তা দিতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২২ দিন গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও সমুদ্র মোহনায় কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামেরা মা ইলিশ রক্ষার গুরুত্ব ও আইন ভঙ্গের শাস্তির বিষয়ে আলোচনা করবেন।
ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে ৬ মাস আগে বৈশাখে। মা ইলিশের
ডিম ছাড়ার সময় চলে এসেছে। যে কারণে ইলিশ শিকারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা।
দেশে বছরে যে পরিমান ইলিশ পাওয়া যায় তার ৩ ভাগের ১ ভাগ আসে
মেঘনা-তেঁতুলিয়া আর বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে। মৎস্য বিভাগের নিবন্ধিত ১ লাখ ২৩ হাজার জেলেসহ প্রায় ৫ লাখ মানুষ এই ইলিশের উপর নির্ভরশীল।
এবছর কাঙ্খিত ইলিশ না পেলেও ইলিশ শিকারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা মানতে প্রস্তুত ভোলার জেলেরা। ভোলার ইলিশা, তুলাতুলি, নাছির মাঝি, দৌলতখান এবং চরফ্যাসনের সামরাজ ও বেতুয়া ঘাটের জেলেরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন, আগামীতে বেশি ইলিশ পাওয়ার আশা এবং সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে এ কয়দিন ইলিশ সংগ্রহ থেকে বিরত থাকবেন। তবে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রণোদনার চাল যেনো
সময় মতো পাওয়া যায় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার দাবি করেছেন জেলেরা।
জেলেরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, বিভিন্ন এনজিওতে তাদের ঋণ আছে এসময়ে তারা এগুলো পরিশোধ করতে পারবে না। তাই নিষেধাজ্ঞার সময় ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
ভোলার মৎস্য বিভাগ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছে, জেলেদেরকে ইলিশ শিকার থেকে এই কয়দিন বিরত রাখতে মৎস্য বিভাগ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জেলেদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা এবং নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করছে।
আশা কর যাচ্ছে, জেলেদেরকে যদি এই ৩ সপ্তাহ ইলিশ শিকার থেকে বিরত রাখা যায় তাহলে, অন্তত ৭০ ভাগ মা ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে পারবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ভোলা অফিসের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন, এ বছর জেলেদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে এবং সকল জেলেই যাতে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনার চাল পেতে পারে সে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে আইন অমান্য করে ইলিশ শিকার করলে জেলেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।