দিন শেষ হয় আর সূর্যের তাপ ধীরে ধীরে মিইয়ে যেতে থাকে। কিন্তু শেষ বিকেলের সূর্যের তাপেও এভাবে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হতে হবে সেটা নিশ্চয়ই কল্পনাও করেনি নিউজিল্যান্ড। ক্রিকেট ভক্তদের দুরুদুরু মন যখন ‘বিদায়’ শব্দটা শোনার আশঙ্কা করছে; ঠিক তখন লাসিথ মালিঙ্গা বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ টি-২০তে তিনি যা করেছেন তা রীতিমতো ইতিহাস।
শ্রীলঙ্কার দেয়া ১২৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমেই মালিঙ্গার তোপে বিধ্বস্ত হয় নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তৃতীয় বলে ওপেনার কলিন মানরোকে বোল্ড করে টি-২০তে ১০০ উইকেট পূর্ণ করেন। পরের ডেলিভারিটা বুঝতেই পারলেন না হামিস রাদারফোর্ড। লেগ বিফোরের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও রিভিউ নিয়ে উইকেটটি পেয়ে যান তিনি। পরের বলে কলিন ডি গ্রান্ডহোমের স্ট্যাম্প উপড়ে দিয়ে হ্যাট্রিক পূরণ করেন। মালিঙ্গার তোপ সামলাতে এরপর ক্রিজে আসেন কিউইদের অভিজ্ঞ সেনানী রস টেইলর। কিন্তু, তার এতদিনের অভিজ্ঞতা কোনো কাজেই আসলো না। দিনটি যে লাসিথ মালিঙ্গারই ছিল! দোষটা টেইলরকে দেয়াও যায় না। ওভারের শেষ ডেলিভারিটা মালির সেরা অস্ত্র-ইয়র্কার। টানা চার বলে টানা চার উইকেট নিয়ে ইতিহাসের পাতায় আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করেন নেন লঙ্কান কিংবদন্তী।
সেখানেই শেষ নয়, এক ওভার পর বলে এসে টিম সেইফির্টকে তুলে নিয়ে সফরকারীদের প্রতিরোধই ভেঙে দেন। এদিন লঙ্কান অধিনায়ক মালিঙ্গার বোলিং ফিগারও দেখার মতো- ৪-১-৬-৫। অর্থাৎ, যে রান খরচ করেছেন তার চেয়ে মাত্র একটি উইকেট কম শিকার করেছেন। অধিনায়কের এমন প্রদর্শনীর দিনে শ্রীলঙ্কাও তুলে নিয়েছে সহজ জয়। ১৬ ওভারে ৮৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ায় নিউজিল্যান্ডকে মেনে নিতে হয়েছে ৩৭ রানের পরাজয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪ বলে দুইবার ৪ উইকেট নেয়া একমাত্র বোলার লাসিথ মালিঙ্গা। এর আগে তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটেও ৪ বলে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। তা ছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুইটি হ্যাটট্রিকের মালিক তিনি। এর আগে কলম্বোতে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে দুটি হ্যাটট্রিকের কীর্তি নেই আর কারো। এটি টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে পঞ্চম হ্যাটট্রিকের ঘটনা। প্রথম হ্যাটট্রিকের মালিক সাবেক অজি ফাস্ট বোলার ব্রেট লি। এই কীর্তি তিনি গড়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে।
টি-টোয়েন্টিতে চার বলে চার উইকেট পাওয়ার প্রথম কীর্তিটি অবশ্য রশিদ খানের দখলে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েছিলেন আফগান লেগ স্পিনার। তবে তার কীর্তিটি অবশ্য দুই ওভার মিলিয়ে। অর্থাৎ, এক ওভারের শেষ বলে একটি আর পরের ওভারের প্রথম তিন বলে বাকি তিনটি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক সংখ্যা এখন পাঁচটি। এক্ষেত্রে তিনি পাকিস্তানি কিংবদন্তী ওয়াসিম আকরামকে পেছনে ফেলেছেন।