খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভাণ্ডারপাড়া গ্রামে মেধাবী স্কুলছাত্রী আসমা খাতুনকে (১৯) পাঁচ বছর ধরে ঘরের খুঁটির সঙ্গে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। অমানবিক এ জীবনযাপন যেন তার নিত্যদিনের সাথী। অভাবের কারণে মেয়েটির ঠিক মতো চিকিৎসাও করাতে পারছে না পরিবার। ভূমিহীন অসহায় এ পরিবারটির সহায়তায় এগিয়ে আসেনি কেউ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ভাণ্ডারপাড়া গ্রামের দিনমজুর আবদুর রহমান ব্যাপারির বড় মেয়ে আসমা খাতুন বাড়ির বারান্দা অথবা ঘরের ভেতর ২৪ ঘণ্টাই খুঁটির সঙ্গে শেকলে বাঁধা থাকে। গ্রামের সবার জানে আসমা পাগল। অভাবের সংসার আর মেয়ের শেকলে বাঁধা এ দুর্বিষহ জীবন নিয়ে মা-বাবা-ভাই-বোন সব সময় থাকেন উৎকণ্ঠায়। গত সাড়ে চার বছর ওই পরিবারটির পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। শেকলে বাঁধা আসমার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।
সামান্য চিকিৎসায় আর কবিরাজি মতে ঝাড়ফুঁক করে মৃত্যু পথযাত্রী মেয়েটাকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আসমার বাবা দিনমজুর আবদুর রহমান ব্যাপারি জানান, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে, আসমা যখন ডুমুরিয়া (সদর) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত, তখন তার সামান্য মাথার সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় চিকিৎসক ও কবিরাজ ব্যবস্থাপত্র দেন। তাতে কোনো কাজ হয়নি। ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। সুযোগ পেলেই আসমা বাড়ি থেকে বের হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে এবং বিভিন্নজনের সঙ্গে খারাপ ও মারমুখী আচরণ করতে থাকে। কখনও কাঁদে আবার কখনও হাসে। খাবার প্রতি তার তেমন কোনো চাহিদা নেই। এসব আচরণ থেকে রক্ষা পেতে আসমার মা-বাবা তাকে শেকল দিয়ে বাড়ির বারান্দায় বেঁধে রাখেন। পাঁচ বছর ধরে আসমা বাড়ির বারান্দা বা ঘরে শেকলবন্দি অবস্থায় আছে। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে আসমা বড়। অন্য ভাই-বোন অতিকষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। আসমার বাবা আবদুর রহমান তার মেয়ের সুচিকিৎসার জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চান।
ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইউব হোসেন জানান, আসমা মেধাবী ও ভালো মেয়ে। সে লেখাপড়ায়ও খুব ভালো ছিল। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে এ+ পেয়ে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল। হঠাৎ আসমার অবস্থা কেন এমনটি হলো তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে অভাবের তাড়নায় ঝাড়ফুঁক করায় মেয়েটি আধমরা হয়ে গেছে। ভালো চিকিৎকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। অর্থাভাবে মেয়েটির ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না।
ডুমুরিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মারুফ হাসান বলেন, মেয়েটির কোনো মানসিক সমস্যা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কবিরাজ বা ঝাড়ফুঁক নয়, তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পরামর্শ দেন।