৫০ টাকার জন্য নতুন বই কেড়ে নেওয়ায় এখনও কান্না থামছে না নীলফামারীর জলঢাকার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শ্রী মতি কাজলী রানী রায়ের (১১)। বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাবা দিন মজুর কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বিচার চেয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদ ও সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান ওই বিদ্যালয়ে তদন্তে এলে ঘটনার সত্যতা পান এবং ওই শিক্ষার্থীকে পুনরায় নতুন এক সেট বই দিয়ে বনভোজনে পাঠিয়ে দেন।
ঘটনাটি ঘটেছে, নীলফামারী জলঢাকার গাবরোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকসহ সহকারী শিক্ষকরা। বনভোজনে শিক্ষার্থী প্রতি বাধ্যতামূলক ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্ত শ্রী মতি কাজলী রানী রায়ের দিন মজুর বাবা ২শ ৫০ টাকার বদলে ২শ টাকা দেন। ৫০ টাকা কম হওয়ায় ক্ষিপ্ত হন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। কাজলী রানীর সাথে দুর্ব্যবহার করে টাকা ফেরত দেন তিনি।
এমনকি কাজলী রানীর হাতে থাকা নতুন বইগুলো কেড়ে নেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক। এ ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েন কাজলী রানী। শুধু এ অভিযোগই নয়, প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক পুনিল চন্দ্র রায়, মলিনা বেগমসহ অনেকের।
বিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, তিন শ্রেণিতে মোট ৮০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও টাকা দিতে পারেনি ৫০ জন। মাত্র ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য এ আয়োজন। বনভোজনে যেতে না পারায় মন খারাপ বাকি শিক্ষার্থীদের।
আর যারা যেতে পেরেছে তাও আবার ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান যোগে। বুধবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এক একটি অটোভ্যানে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৫ থেকে ২০ জন গাদাগাদি করে বসে আছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীর হাত থেকে বই কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ৮০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে বনভোজনে যাওয়ার কথা, অনেকে টাকা দিতে না পারায় বাধ্য হয়ে ৩০ জনকে নিয়ে বনভোজনে যাচ্ছি।’
সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে শিক্ষা অফিসারসহ তদন্তে গিয়েছিলাম, সবার কথা শুনেছি, লিখিত আকারে ইউএনও স্যারকে জানাবো।’
তদন্তের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মাদ বলেন, ‘কিছু ভুল ভাল হয়েছে, আমরা ওই শিক্ষার্থীকে আবরো নতুন বই দিয়ে বনভোজনে পাঠিয়েছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজাউদ্দৌলার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।