ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন ঠিক করেছে ৩০ জানুয়ারি। সেদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা। দুটো বিষয় নিয়ে যাতে কোনো ধরনের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দুই সিটির ৫৩টি প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে পূজা ও ভোট হবে। নির্বাচন কমিশন জোর দিয়ে বলছে, স্কুল বা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। এটা নিয়ে সমস্যা হবে বলে কমিশন মনে করছে না।
সরস্বতী পূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনের বিষয়টি সামনে রেখে ভোটকক্ষ সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ২৭টি ও দক্ষিণ সিটির ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভোটকেন্দ্রে পূজা উদযাপিত হবে বলে কমিশন চিহ্নিত করেছে। ঐ সব প্রতিষ্ঠানে পূজা উদযাপনের নির্ধারিত স্থান বা কক্ষে ভোটকক্ষ বানাবে না ইসি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে নির্বাচন ভবনে এক অনানুষ্ঠানিক কমিশন সভায় ঢাকার দুই রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এমনই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটির রিটার্নিং অফিসার আবুল কাশেম বলেন, তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বা অভিভাবক কর্নার অথবা মিলনায়তনে পূজা হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে নির্বিঘ্নে পূজা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা থাকবে।
বৈঠক শেষে সব কেন্দ্রে পূজা হবে—হিন্দু পূজার্থীরা এমন দাবি করলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর তা নাকচ করে বলেছেন, কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূজা হয়, তার একটি খসড়া তালিকা পাওয়া গেছে। একটা পরিসংখ্যান তারা নিয়েছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি (ভোটকেন্দ্র) প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূজা হয়। ১ হাজার ১৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে দক্ষিণে ২৬টি প্রতিষ্ঠানে পূজা হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী উত্তরে ২ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২ দশমিক ২৬ শতাংশ কেন্দ্রে পূজা হবে। আর দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রের মধ্যে পূজা হবে ৫৩টি কেন্দ্রে। অর্থাত্, ২ দশমিক ১৫ ভোটকেন্দ্রে পূজা হবে।
পূজা আর ভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হলে সমস্যা হবে না উল্লেখ করে সচিব বলেন, এই তথ্যও নেওয়া হয়েছে যে পূজা তারা কোথায় করে। যেমন অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়ের কথা বলা হয়েছে, এটা তারা করে তাদের অডিটরিয়ামে। এটা বেশ বড় স্কুল, তাই সব রুম নির্বাচনের জন্যও লাগবে না। পূজার জন্য তো লাগবেই না। অতএব, পূজা যেদিকে হবে, তার থেকে দূরত্ব রেখে ভোট গ্রহণ করা হবে, যেন নির্বাচনের জন্য পূজার সমস্যা না হয়। পূজার জন্য নির্বাচনের সমস্যা যেন না হয়।
ইসির সচিব বলছেন, পূজা কিন্তু ২৯ জানুয়ারি। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের সঙ্গেই তাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, পূজা ২৯ তারিখেই শেষ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, পূজা ৩০ তারিখ পর্যন্ত একটা সময় আছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত লগ্ন আছে।
ইসির সিনিয়র সচিব মনে করেন, ছাত্ররা আন্দোলন কেন করছেন, কারা এটিকে সংগঠিত করছেন, সেটার তথ্য নেই। হয়তো কেউ পেছন থেকে ভুল বোঝাচ্ছেন—পূজার দিনে ভোট হচ্ছে। আদালত যে আদেশ দিয়েছে, বুঝেশুনেই দিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনও বুঝেশুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে—এ কথা নিশ্চয়ই তাদের বোঝানো হচ্ছে না।
সচিব আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা ভুল বুঝতেই পারেন। তাদের তো বয়স কম। দ্রুত তাদের এই ভুলটা কেটে যাবে। তারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন। আন্দোলনরত ছাত্রদের অনুরোধ করব, তারা যেন কোনো বিভ্রান্তির কবলে পড়েন, কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করেন, যেন লেখাপড়ায় মনোযোগ দেন।
এদিকে, মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা তার নির্বাচনের পথে বাধা নয় বলে জানিয়েছেন ইসি। এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ছিল, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে নির্বাচন কাজ পরিচালনাকারী বা সমর্থকদের যেন গ্রেফতার বা হয়রানি করা না হয়। কিন্তু ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধে যে মামলা সেটা পুরোনো মামলা। এটা একটা দুর্নীতির মামলা। বিষয়টি এমন না যে এখনই তাকে গ্রেফতার করতে হবে।
মামলার বিষয়ে আদালতে শুনানি হয়েছে, এটা তাদের বা পুলিশের পক্ষ থেকে না। এটা আদালতে শুনানি হয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি তারিখ ঠিক হয়েছে তখন শুনানি দেবেন তারা। এর ফলে ইশরাক হোসেনের নির্বাচনের প্রচারণায় কোনো বাধা নেই।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম প্রস্তুতির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, প্রস্তুতি সন্তোষজনক। কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। তবে প্রার্থীরা যত সক্রিয় থাকবেন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তত বাড়বে। অনেকেই ভোট নয়, পরিচিতি বাড়ানোর জন্য প্রার্থী হয়।