বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে চান বুয়েটের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধের পক্ষে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতি বছর ৭ অক্টোবর দিনটিকে ক্যাম্পাসে ছাত্র নির্যাতনবিরোধী দিবস পালনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজেদের মত দিয়েছেন। এ বিষয়ে পক্ষ থেকে মত নেওয়া হয়েছে বর্তমান এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের।
এ ব্যাপারে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী হত্যার জন্য এর আগে রাউফুন বসুনিয়া দিবস, সনি হত্যা দিবস পালনের নজির রয়েছে। রাউফুন বসুনিয়া এরশাদের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনে এবং সনি ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নিহত হন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে সবাই সেই দিনগুলো আসলে ভুলে গেছে এবং তা আর পালন করতেও দেখা যায় না। আবরার ফাহাদ হত্যার মর্মান্তিক ঘটনাকে স্মরণে রাখার জন্য এ দিনটি বিশেষভাবে পালন করা যেতে পারে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেটা যেন হারিয়ে না যায়, সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং বিশিষ্ট আইনজীবী হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল বলেন, স্মরণকালের ইতিহাসের মধ্যে বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনা খুবই নৃশংস। ক্যাম্পাসগুলোতে এর আগে বহুবার সন্ত্রাস হয়েছে, দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু পড়ার টেবিল থেকে একজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নির্যাতন, গায়ে মলম লাগিয়ে আবারও নির্যাতন, নির্যাতনের পর খুনিদের ঠাণ্ডা মাথায় স্বাভাবিক আচরণ, এসবই নজিরবিহীন। এ কারণে এই মর্মান্তিক হত্যার দিনটিকে ক্যাম্পাসে নির্যাতনবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করা উচিত। এই একটি দিনে প্রতি বছর শপথ নেওয়া উচিত, এ ধরনের ঘটনা যেন আর কোনো ক্যাম্পাসেই না ঘটে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে এই বুয়েটেই ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নিরীহ শিক্ষার্থী সাবেকুন্নাহার সনি মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছিলেন। পরে অনেকেই সে ঘটনা ভুলে গেছে। আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনা যেন সবাই ভুলে না যায়, সে জন্যই দিবসটি বিশেষভাবে পালন করা উচিত।
ডাকসুর বর্তমান ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ফাহাদ হত্যার ঘটনার সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। একজন মানুষ দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নিজের ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছিলেন এবং এ জন্য তাকে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছে। এ জন্যই এর আগে তিনি দিনটিকে 'আবরার হত্যা দিবস' হিসেবে পালনের প্রস্তাব করেছিলেন। যদি অন্য নামেও দিনটি বিশেষভাবে পালন করা হয় সেক্ষেত্রে তার সমর্থন থাকবে। তিনি চান ক্যাম্পাসে ছাত্র নির্যাতন বন্ধ হোক।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ভিন্নমত দিয়ে বলেন, বুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য পুরো ছাত্রলীগকে দায়ী করা অযৌক্তিক। গুটি কয়েকের নিজেদের সিদ্ধান্তে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে এবং ছাত্রলীগ সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। অতীতে অন্য কোনো সরকারের সময়ে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, হত্যার ঘটনার পর এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নজির নেই। কিন্তু এখন এ ঘটনাকে পুঁজি করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের জন্য যে ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী শক্তি, অন্ধকারের সাম্প্রদায়িক শক্তিরই সুবিধা হবে সবচেয়ে বেশি।
তারা নামে-বেনামে ক্যাম্পাসে নিজেদের আধিপত্য গড়ে তোলার সুযোগ পাবে, যেটা জাতির জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে। ফাহাদ হত্যার দিনকে যারা বিশেষভাবে পালনের কথা বলছেন তারাও প্রকৃতপক্ষে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের কৌশল হিসেবেই এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আসছেন। যুক্তির বিচারে ছাত্রলীগ এ ধরনের প্রস্তাব সমর্থন করতে পারে না।
এ ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ছাত্রদল সব সময়ই ক্যাম্পাসে নির্যাতন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। এ কারণে আবরার ফাহাদ হত্যার দিনটিকে 'ক্যাম্পাসে নির্যাতনবিরোধী দিবস' হিসেবে পালন করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটছে তার সর্বশেষ মর্মান্তিক পরিণতি আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড। ছাত্র ইউনিয়ন চায় এটাই হোক ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শেষ ঘটনা।
আর কোনো নির্যাতনের ঘটনা যেন কখনই না ঘটে। এ জন্য এ দিনটিকে 'ছাত্র নির্যাতনবিরোধী' দিবস হিসেবে পালন করা হলে সেটাই হবে সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। তিনি আরও বলেন, এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থন করে না, মেনেও নেবে না।