৭ কলেজের কয়েকটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করার আহ্বান ছাত্র ফ্রন্টের - দৈনিকশিক্ষা

৭ কলেজের কয়েকটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করার আহ্বান ছাত্র ফ্রন্টের

ঢাবি প্রতিনিধি |

সাত কলেজের মধ্যে কয়েকটি প্রধান কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করে অন্যান্য কলেজগুলোকে এর অধিভুক্ত করে স্থায়ী সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মলেন এই আহ্বান করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৭ কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন যাবৎ আন্দোলন করছে। তাদের বক্তব্য হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৭ কলেজের শিক্ষা কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকতে হচ্ছে, ফলে শিক্ষকদের পাঠদান ও গবেষণাকর্ম ব্যাহত হচ্ছে, নিয়মিত ফলপ্রদান বিলম্বিত হচ্ছে। ৭ কলেজের প্রশাসনিক কিছু কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে হওয়ায় সেখানে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আবার ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করছে। তাদের বক্তব্য হল, অধিভুক্তির পর সেশনজট বেড়েছে, যাদের ব্যাচের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৪র্থ বর্ষে পড়ছে সেখানে তারা এখনও ২য় বর্ষ শেষ করতে পারেনি। তাদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করছেন, খাতাও দেখছেন, কিন্তু পড়াচ্ছেন ৭ কলেজের শিক্ষকরা।

এতে খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে বিস্তর অভিযোগ আছে। দেখা যাচ্ছে যে, কোনো শিক্ষার্থী দুই বিষয়ে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছে, কিন্তু ফেল দেখানো হয়েছে তিন বিষয়ে। এতে তাদের শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে, দুই প্রশাসনের কাছে ছোটাছুটি করে তারা কোন কিনারা করতে পারছেন না।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থী, যারা কেউই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত নয়, এই সংকটের জন্য দায়ীও নয়, তাদের পরস্পরের সম্পর্কে ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে, আন্দোলনের বক্তব্যের মধ্যে এর কিছু ছাপও দেখা যাচ্ছে যা শঙ্কা সৃষ্টি না করে পারে না। আমরা মনে করি এই সংকটের মূল কারণে পৌঁছাতে না পারলে ও সে বিষয়ে আলোকপাত করতে না পারলে এর সমাধানের পথও নির্দেশ করা যাবে না।

এমন অবস্থায় ছাত্র ফ্রন্ট আসন্ন এই সংকট সমাধানে ৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সেই প্রস্তাবনাগুলো হল :

১. আশু সমাধান হিসেবে ৭ কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করতে হবে। ৭ কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত আয়োজন দিয়েই তা বাস্তবায়ন সম্ভব।

২. স্থায়ী সমাধান হিসেবে ৭ কলেজের মধ্যে প্রধান কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে অন্যান্য কলেজগুলোকে তার অধিভুক্ত করতে হবে।

৩. সকল প্রকার বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রদের শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত উচ্চ শিক্ষার কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে।

এ সময় সরকারকে উদ্দেশ্য করে মাসুদ রানা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পূর্বের দাবি থেকে ভিন্ন কিছু নয়। তার মানে, এ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান এবং সরকার তা জেনেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সরকারের পদক্ষেপ সাধারণত ছাত্রস্বার্থে নেয়া হয় না, নেয়া হয় এই সকল প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কায়েমি গোষ্ঠীর স্বার্থে। এটা প্রমাণিত হয়, যখন ৭ কলেজকে অন্তর্ভুক্তির পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা ছিল, দুই উপাচার্যের দ্বন্দ্ব ছিল ইত্যাদি বক্তব্য বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় আসে এবং এগুলোর সত্যতাও আছে বলে জানা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে এই ছাত্র নেতা বলেন, ৭ কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব নেবার মতো সামর্থ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল শিক্ষক-কর্মকর্তাই মনে করেন। আবার কলেজগুলোর শিক্ষক ও ছাত্রদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে বিকশিত হওয়ার যে চিন্তা ছিল। সেও আজ আর নেই, এখন কোনোরকমে পাস করে বের হতে পারলেই তারা বাঁচেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই তার শিক্ষার মান ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন নিয়ে প্রশ্নের মুখে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০টি বিভাগে ইভেনিং মাস্টার্স, ডিপ্লোমা ও বিভিন্ন প্রফেশনাল কোর্স চালু আছে। শত শত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এতে যুক্ত। এই কোর্সগুলোর পরীক্ষার ফলাফল হয় দ্রুত, সাধারণত একমাসের বেশি দেরি কখনই হয় না। অথচ রেগুলার শিক্ষার্থীদের ফলাফল দীর্ঘদিনেও প্রকাশ করা হয় না। অনেকদিন থেকেই অভিযোগ এসকল বাণিজ্যিক কোর্সে বেশ আয় হয় বলে শিক্ষকদের মনযোগও বেশি, ফলে নিয়মিত ছাত্রদের শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটছে।

আবার শিক্ষকরা বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও কনসালটেন্সি করেন। শ্রেণিকক্ষের সংকট, শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ ও দুর্নীতির কারণে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া, গবেষণা খাতে নামমাত্র বরাদ্দ এসবকিছুর কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমনিতেই ধুঁকছে। তাই ৭ কলেজ একমাত্র কারণ নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণ তার শিক্ষাকে অনেক আগেই ধ্বংস করে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, ঢাবি ছাত্র ফ্রন্ট সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মন তমাসহ অন্যান্য নেতারা।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074889659881592