হঠাৎ করে দেশের সাতটি সরকারি বিশ্বিবিদ্যালয় উত্তাল হয়ে উঠেছে। আন্দোলনের কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা লাটে উঠেছে। কিভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে সে বিষয়ে এখনো দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ড নেই(শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রতাশিত প্রত্রিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি ণিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য ।
বিস্তারিত: প্রচলিত আইন অনুসারে দেশের রাষ্ট্রপতি এসব বিশ্বিবিদ্যালয়র আচার্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু রাষ্ট্রপতির দপ্তরকে সাচিবিক কাজগুলো করে দেয়। যদিও বিশ^বিদ্যালয়গুলোর অস্থিরতা নিরসনের দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপরই বর্তায়। অথচ উচ্চশিক্ষায় এ জাতীয় অস্থিরতা বিরাজ করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনো নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিষ্ক্রিয় থাকার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি অসুস্থ স্বামীর সেবাকাজের জন্য এ মুহূর্তে ভারতে রয়েছেন। ই-নথিতে সই করার মাধ্যমে বদলি কাজের মতো রুটিন কিছু কাজ করছেন। কিন্তু দেশে না থাকায় তিনি নীতিগত কোনো কাজ করাতে এবং করতে পারছেন না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চশিক্ষায় এরকম উত্তাল পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজে অথবা বিশ্বিবদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে সমাধান সূত্র বের করা উচিত। কিন্তু মন্ত্রণালয় এখনো সেই সমাধান সূত্র বের করতে পারেনি। আর মন্ত্রণালয়ের এমন উদাসীনতায় ইউজিসিও খুব একটা গরজ দেখাচ্ছে না।
জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, হঠাৎ করে একাধিক বিশ^বিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পরিস্থিতি আমরা অবগত আছি। প্রত্যেকটি বিশ^বিদ্যালয়ের আলাদা আলাদা ‘কেস’, আলাদাভাবেই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি হতে হবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ‘সক্রিয়’ হতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসিকে কোনো নির্দেশনা দিয়েছে কি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো নির্দেশনা ইউজিসিতে পাঠায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সাতটি বিশ^বিদ্যালয়ে সাত রকম আন্দোলন হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্বিবদ্যালয়।
এসব বিশ্বিবদ্যালয়ের কোনোটিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের, আবার কোনোটিতে উপাচার্যের স্বৈরাচারী মনোভাবে বিরুদ্ধে, কোনোটিতে যৌন নিপীড়ন নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। তবে আন্দোলনের রকমফের হলেও সব উপাচার্যই প্রায় একইরকম ‘দমননীতি’ প্রয়োগ করে পরিস্থিতি বাগে আনতে চাইছেন। কিন্তু এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে শিক্ষার পরিবেশই নষ্ট হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার পরদিনই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমানের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা পাশাপাশি প্রধান গেইটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় তৃতীয়বার একই পদে একই ব্যক্তিকে প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় তার অপসারণ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে চলমান সংকটের সমাধান না করে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার ঘটনাকে যেকোনো উপায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষের কৌশল হিসেবে দেখছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনে বসার তিনদিন পার হলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। দায়িত্বশীল কেউ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায়ও বসেননি। শিক্ষাবিদদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা কোনোভাবেই বিদ্যমান সংকটের সমাধান হতে পারে না।
সূত্র বলছে, শনিবার দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা ঘটেছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশেই। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের একটি অংশ দেনাপাওনার বিষয়ে আন্দোলন করছে এবং এটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এতে সেখানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত রয়েছে। কদিন আগে পুলিশ-ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের পর এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তাতে নতুন করে যোগ হয়েছে শিক্ষকদের দলাদলি। গত এপ্রিল মাস থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থেমে থেমে বিক্ষোভ হচ্ছে। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি নিয়ে সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি থমথমে। জাহাঙ্গীনগর বিশ^বিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে শিক্ষকরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন। এ নিয়ে আন্দোলনও চলছে সেখানে। গত একসপ্তাহ ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ^বিদ্যালয় শাখা উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্তের ইঙ্গিত দিলেও এখনো সেই তদন্ত কমিটিই গঠন হয়নি।
এ রকম পরিস্থিতিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (মাউশি) সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও মন্ত্রণালয় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি।
জানতে চাইলে মাউশির সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পুরো তথ্য না আসায় তদন্ত কমিটি এখনো গঠন হয়নি। মন্ত্রণালয় নিষ্ক্রিয় নয় বলে দাবি করেন তিনি।