সকলেরই জানা আছে ছাত্রদের শিক্ষাদান নিয়ে কাজ করার প্রেক্ষিতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়। নটর ডেম কলেজ সে কাজে পুরোপুরি সফল বলেই আজ দেশজুড়ে, বিদেশ-বিভুঁইয়ে কলেজটির এত সুনাম। কলেজের সাথে সংশ্লিষ্টদের ধারণা এই অর্জন এমনিতে আসেনি, এসেছে কলেজটির আদর্শের শক্ত ভিত্তির জন্য। কলেজ শুরুই হয়েছিল সুনির্দিষ্ট কিছু আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে। এরমধ্যে নিয়ম মোতাবেক ছাত্রদের সুশিক্ষাদানের সুব্যবস্থা এবং পরিবেশ তৈরি করা ছিল অন্যতম। লক্ষ্য ছিল সুস্থ পরিবেশে ছাত্রেরা নিয়মিত এবং সময়মত ক্লাসে আসবে, শিক্ষকের পাঠদান মনযোগ দিয়ে শুনবে, লাইব্রেরিতে যাবে, ক্লাসের পাঠ তৈরি করবে এবং নিয়ম মত বসবে পরীক্ষায়। অন্যদিকে, শিক্ষকদের কাজ হলো সময়মত ক্লাসে এসে ছাত্রদের পাঠদান করবেন, সিলেবাসের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করবেন। সঠিক সময়ে পুরো সিলেবাস শেষ করবেন। এখনও ছাত্রেরা মনে করে কলেজের সিলেবাস, ল্যাবক্লাস ঠিকমতো শেষ হলেই মাত্র ছাত্রদের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হতো।
ক্লাসে সপ্তাহে কি পড়া হলো তা যাচাইয়ের জন্য নটর ডেম কলেজে কুইজ নামে সাপ্তাহিক একটি পরীক্ষা হয়। শুরু থেকে আজও ছাত্রেরা মনে করে কলেজের কুইজ পরীক্ষা ছিল বাৎসরিক পরীক্ষার জন্য একটি পোক্ত সিঁড়ি। এজন্য পরীক্ষার পূর্বরাতে সারা রাত জেগে কিংবা পরীক্ষার সময়ে কোন কারণে সামান্য শারীরিক অসুস্থ হলেও অধিক চাপ নেয়ার দরকার হয় না।
মজার কথা যে, কলেজের প্রত্যাশা সব ছাত্রই প্রত্যেকটি ক্লাস করবে। এতে ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত হবার ফল সে পাবে পরীক্ষায়। সকল ব্যবহারিক ক্লাসে অংশ নিলে ছাত্রেরা পরবর্তী শিক্ষাজীবনে কোন অসুবিধা ভোগ করবে না। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে অধ্যক্ষ, অফিস কর্মচারীদের দায়িত্ব অপরিসীম। তাঁরা সর্বদা ছাত্রদের কল্যাণে ব্যাপৃত। সাপ্তাহিক কুইজ, ত্রৈমাসিক, বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে সীমিত সময়ের মধ্যে ফল তৈরি করে তা ছাত্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য অফিস কর্মীরাই কাজ করে থাকেন। পরীক্ষার ফল প্রদানে এতটুকু বাড়তি সময়ও নেন না তারা।
নেতৃত্ব গঠন কলেজটির উদ্দেশ্যের আরেকটি দিক। কলেজের সহ-শিক্ষা কার্যক্রম সাহায্য করেছে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গঠনে। কলেজ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন,নেতৃত্ব আসতে পারে কলেজের নানা সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। কলেজে বিভিন্ন নামের বিভিন্ন ক্লাব ছাত্রদের নিয়ে কাজ করে থাকে। এক বা একাধিক শিক্ষক সহ-শিক্ষা কার্যক্রম ক্লাবের পরিচালক হয়ে কাজ করেন, ছাত্রদের শিক্ষা দেন। উল্লেখ্য, এসকল ক্লাবের কোন, কোনটি দেশের প্রথম, যথা-বিজ্ঞান ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব প্রমুখ এবং অতি পরিচিত। এই কলেজের সহ-শিক্ষাক্রমিক নানা কার্যক্রম এবং কর্মকাণ্ড এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে।
নটর ডেম কলেজের বিশ্বাস, নবীন ছাত্রদের মধ্যে সঠিক আদর্শ বপন করতে পারলে তা পরবর্তী জীবনে স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই আদর্শ ছাত্রদের নৈতিকতা তৈরিতেও সহায়তা করে।
লেখক: সাবেক অধ্যাপক (১৯৮৭-২০০৮), ভূগোল বিভাগ, নটর ডেম কলেজ