কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা চরম আবাসন সংকটে রয়েছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থায় রয়েছে ছাত্রীরা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই থাকে আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়ি ও মেসে। সামান্য সংখ্যক শিক্ষার্থী কলেজের হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছে, তারাও নানামুখী দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে আছে। সেখানে অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা এবং গাদাগাদি করে থাকার কারণে তাদের পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুরুদয়াল সরকারি কলেজে বর্তমানে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। বড় প্রতিষ্ঠান হলেও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ও আবাসন ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি।
কলেজ সূত্র জানিয়েছে, ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজারের মতো ছাত্র-ছাত্রী স্থানীয় কিংবা আশপাশের এলাকার। বাকি ১৫ হাজার আসে দূর-দূরান্ত থেকে। তাদের মধ্যে অন্তত সাত-আট হাজার আবার ছাত্রী। কলেজের একমাত্র ছাত্রী হলটি মাত্র ১০০ শয্যার। চাহিদা ও চাপ বেশি থাকায় কর্তৃপক্ষ এই হলে থাকতে দিয়েছে প্রায় তিন গুণ ছাত্রীকে। ফলে স্বাভাবিকভাবে যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রী নিবাসের ছাত্রীরা। তবে ছাত্রীরা মনে করে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও শিক্ষা ও সামগ্রিক পরিবেশের উন্নয়ন সম্ভব।
সরেজমিনে ওই হলে গিয়ে দেখা যায়, যে কমন রুমে ছাত্রীদের অবসর কাটানো, বিনোদন বা খেলাধুলার আয়োজন থাকার কথা, সেখানে থরে থরে শয্যা পাতা। শয্যার পাশে ছোট ছোট টেবিল। কেউ টেবিলে, কেউবা বিছানায় বসে পড়ছে। একটি শয্যার সঙ্গে আরেকটি শয্যা প্রায় লাগোয়া। একটি টেলিভিশনও নেই। নেই খেলাধুলার সরঞ্জাম কিংবা পত্রপত্রিকা। কমনরুম আর ডাইনিংরুমের মাঝখানে সিঁড়ি। সিঁড়ির নিচে একটি টিউবওয়েল। সেই টিউবওয়েল থেকে লাইন ধরে পানি নিচ্ছে ছাত্রীরা। কেউ গোসলের জন্য কেউবা পান করতে।
একজন জানালেন, সাপ্লাই পানিতে প্রচুর আয়রন। তাই গোসলের সময় এ পানি তাঁরা মাথায় ঢালেন না। চুল রক্ষা করতে নলকূপের পানি ব্যবহার করেন। সিঁড়ি বেয়ে বালতি ভর্তি পানি নিয়ে চারতলা পর্যন্ত উঠে হাঁপিয়ে পড়া এক ছাত্রী বললেন, এটি তাঁর প্রতিদিনের কাজ। বহুদিন ধরে সমস্যাটি সমাধানের কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স করছেন তানিয়া আক্তার। তিনি বলেন, হলে একটি গেস্টরুম পর্যন্ত নেই। আত্মীয়-স্বজন কিংবা মা-বাবা এলে তাঁদের বসতে দেয়াও সম্ভব হয় না।
হলের সামগ্রিক সমস্যার বর্ণনা দিয়ে ইংরেজিতে অনার্স পড়ুয়া তাহমিনা আক্তার জানান, হলে থাকার কথা ১০০ জনের; কিন্তু থাকে ২৬৪ জন ছাত্রী। নিচতলায় কমন রুমে ২৪টি শয্যায় থাকতে হচ্ছে ৪৮ জনকে। আর দোতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত ২৭টি কক্ষে বাকিরা থাকছে গাদাগাদি করে। দুজনের জন্য একটি ছোট টেবিল ও বিছানা বরাদ্দ।
তাসলিন জাহান শৈতি বলেন, ‘আমাদের খাবারদাবারে কলেজ বা হল প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। আমরা বাজার করে দিই। বাবুর্চিরা রান্না করে দেন। এসব করতে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। সব মিলিয়ে জেলখানার মতো জীবন পার করছি আমরা।’
ছাত্রীদের অভিযোগ, হলের কোথাও কোনো বাতি নষ্ট হলে সহজে লাগানো হয় না। করিডরের বাতিগুলো প্রায়ই নষ্ট থাকে। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় অন্ধকারেই থাকতে হয়। তা ছাড়া কলেজে ছেলেদের যে দুটি হল রয়েছে, সেখানে প্রত্যেকের জন্য আলাদা টেবিল ও শয্যা রয়েছে। শুধু মেয়েদের রাখা হয়েছে এই গাদাগাদি পরিবেশে।’
ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা সম্পর্কে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ইমান আলী বলেন, এখানে ছেলেদের দুটি আর মেয়েদের একটি হল রয়েছে। সব মিলিয়ে হাজারখানেক শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দেয়া যায়। বাকি ২৪ হাজার শিক্ষার্থীই বাইরে থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কলেজের পক্ষ থেকে বড় আকারের কয়েকটি হলের কথা কর্তৃপক্ষকে বলেছি। তা ছাড়া ছাত্রদের একটি ও ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হল নির্মাণাধীন রয়েছে। এ দুটি চালু হলে সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে। আবাসন সমস্যা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’