সম্প্রতি বরগুনায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নির্মমভাবে নিহত হৃদয়ের এসএসসির ফল প্রকাশ হয়েছে আজ। সে বরগুনার টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ১১ বা এ গ্রেড পেয়ে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোক। তার ওপর সেই হারানো সন্তানের এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলের খবর। সব মিলিয়ে পাথর বনে গেছেন নিহত হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম।
হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম ছেলের রেজাল্টের কথা শুনতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলতে থাকেন, হৃদয়ের এই রেজাল্ট দিয়ে আমি এখন কী হবে? আমি কি আমার ছেলেকে কখনও ফিরে পাবো?
তিনি দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে আরও বলেন, তাদের একমাত্র ছেলে হৃদয় লেখাপড়া শেষ করে একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিল।
হৃদয়ের বাবা দরিদ্র দেলোয়ার হোসেন একজন রিকশাচালক। তারা বরগুনার চরকলোনী এলাকার চাঁদশী সড়কের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি বুড়িরচর ইউনিয়নের লবনগোলা গ্রামে।
টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটেরর প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, খুব ভালো ছাত্র না হলেও খারাপ ছাত্র ছিলো না হৃদয়। আমাদেরও প্রত্যাশা ছিলো সে অনন্তত জিপিএ ৪ পাবে। কিন্তু তার থেকেও সে বেশি পেয়েছে। সে জিপিএ ৪ দশমিক ১১ পেয়েছে। এত কম বয়সে এমন নির্মম মৃত্যু আসলে মেনে নেয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, হৃদয়ের জন্য পুরো স্কুলের সব শিক্ষার্থী আজ শোকাহত।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মে সোমবার ঈদের দিন বিকালে বরগুনার পায়রা নদীর পাড়ে গোলবুনিয়া এলাকায় ঘুরতে গেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হৃদয়কে গুরুতর আহত করে স্থানীয় একটি কিশোর গ্রুপ। গুরুতর আহত অবস্থায় হৃদয়কে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে তার অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল-শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরের দিন ২৬ মে মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়। কিশোর হৃদয়ের ওপর ২০ থেকে ২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দলের নির্মম এ হামলার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়।
এ ঘটনায় গত ২৬ মে মঙ্গলবার রাতে নিহত হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৪ থেকে ১৫ জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, এই মামলার প্রধান আসামিসহ ইতোমধ্যেই আমরা সাত আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। গ্রেফতার সাত আসামির মধ্যে তিন আসামির ইতোমধ্যে আদালত পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আমরা তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এছাড়াও বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।