মাহবুবা আফরোজের ৭ বছর বয়সে বাবা মারা যায । তিনি তাঁর বাবার একমাত্র মেয়ে। বাবার মৃত্যুর ৩ বছর পর মায়ের অন্যত্র বিয়ে দেয় তার নানার পরিবার। দরিদ্র বৃদ্ধ নানা আব্দুল জলিলের দিনমজুরের সামান্য আয়ে চলে সংসার। তিনি ছোটবেলা থেকে নানার বাড়িতে থেকে শত কষ্টের মাঝেও লেখা পড়া চালিয়ে যান। পরিবারে অভাব-অনাটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। ৩ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে স্কুলে নিয়মিত যাতায়ত করতেন। এর পরও টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে মোছা. মাহবুবা আফরোজ।
দারিদ্র্যতা আর শতবাধার জয় করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা আরেফা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাহবুবা আফরোজ ।
মাহবুবা আফরোজের নানার বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের নবীনগর গ্রামের আফতাব মোড় এলাকায়। তার বাবা মৃত মো. মোফাজ্জল হোসেন আর মা মোছা. মনোয়ারা বেগম।
মাহবুবা আফরোজ বলেন,‘আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে। আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বিসিএস (ক্যাডার) হয়ে শিক্ষার আলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
নানী মোছা. আনিছা বেগম জানান, আমার নাতনী মাহবুবা আফরোজ প্রায়ই না খেয়ে স্কুল যেত। তার বাবা নেই। তাঁর নানার দিনমজুরের সামান্য আয়ে কোনো রকমে সংসার চলছে। সে প্রত্যেক ক্লাসে ভালো ফলাফল করেছে। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের তো আর সামর্থ্য নেই নাতনীকে কলেজে পড়ানোর। এখন কোনো দানশীল ব্যক্তি যদি তার লেখাপড়ার ভার বহন করে তাহলে সে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।’
বাউরা আরেফা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষ মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘মাহবুবা আফরোজ মেয়েটি খুবই নম্র-ভদ্র ও মেধাবী। অনেক কষ্টের মাঝে সব ক্লাসে ভালো ফলাফল করেছে। অস্বচ্ছল হওয়ার কারণে আমাদের স্কুলে আমরা তাঁকে লেখাপড়ার উপকরণ ও বিনা মূল্যে পড়ার ব্যবস্থা করেছি। যদি দেশের কোনো শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি তাকে পড়াশুনার সহযোগিতা করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে ভেো কিছু করবে। মেয়েটির বিসিএস (ক্যাডার) হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।’