শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নেই—চিকিৎসকের দেওয়া এমন সনদপত্র নিয়েই বাংলাদেশে ঢুকতে হবে বিদেশিদের। আর সেই সনদ এ দেশের যে বন্দর দিয়ে ঢুকবে সেখানে তাদের জমা দিতে হবে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় সব কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে পাঠানো বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। শনিবার (২১ মার্চ) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মেহেদী হাসান।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত ১৫ মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় বিদেশি মিশনগুলোকে বাংলাদেশ ভ্রমণসংক্রান্ত বেশ কিছু নির্দেশনা অবহিত করেছিল। গত বৃহস্পতিবার নতুন আরেকটি নির্দেশনায় বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য বিদেশিদের ‘মেডিক্যাল সার্টিফিকেট’ (চিকিৎসা সনদ) লাগবে বলে জানানো হয়। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে চীনের উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার চীনের নাগরিকদের জন্য আগমনী ভিসা স্থগিত করে। পরে জাপানের ক্ষেত্রেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নেই—চিকিৎসকের দেওয়া এমন সনদপত্রসহ ভিসা আবেদনের ব্যবস্থা ছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার ঢাকাস্থ বিদেশি মিশনগুলোকে পাঠানো বার্তায় বলেছে, আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব দেশের যাত্রীদের জন্য বাংলাদেশে আগমনী ভিসা ব্যবস্থা স্থগিত থাকবে। কোনো যাত্রী গত ১ মার্চ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অঞ্চল ও ইরানে বসবাস বা ভ্রমণ করে থাকলে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে ঢুকতে পারবে না। ইরান ও ইইউ অঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে যারা গত ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ইরান ও ইইউ অঞ্চলের বাইরে আছে তারা বৈধ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পারবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, বিদেশিদের মধ্যে যাদের বাংলাদেশের বৈধ ভিসা আছে বা নতুন ভিসার জন্য আবেদন করেছে তাদের সম্ভাব্য বাংলাদেশ ভ্রমণের আগে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইস্যু করা চিকিৎসা সনদ এবং এর ইংরেজিতে অনুবাদ থাকতে হবে। সেই সনদে উল্লেখ থাকতে হবে যে যাত্রীর শরীরে কোভিড-১৯-এর (করোনাভাইরাস) উপসর্গ নেই। সংশ্লিষ্ট বিদেশি যাত্রী বাংলাদেশে বিমানবন্দর/সমুদ্রবন্দর/স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশের সময় সেই সনদ জমা দিতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশি মিশনগুলোকে জানিয়েছে, করোনা সংক্রমিত যেকোনো দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বাংলাদেশে প্রবেশের পর দুই সপ্তাহে ‘কোয়ারেন্টিন’ (সঙ্গরোধ) অবস্থায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশের পর স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন যে সংশ্লিষ্ট যাত্রী ‘সেলফ কোয়ারেন্টিনে’ থাকবে, নাকি সরকার পরিচালিত স্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে থাকবে। সেলফ কোয়ারেন্টিন কঠোরভাবে পালন করা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তা পর্যবেক্ষণ করবে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা চালু থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশি মিশনগুলোকে জানিয়েছে, বাংলাদেশে কূটনৈতিক মিশনগুলোতে পদায়নকৃত কূটনৈতিক, অফিশিয়াল পাসপোর্ট ও ‘লিসি পাসিস’ধারী (জাতিসংঘের দেওয়া ট্রাভেল ডকুমেন্ট) ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য চিকিৎসা সনদ এবং ১ মার্চ থেকে ইরান ও ইইউ অঞ্চলে ভ্রমণ না করার শর্ত পূরণের আবশ্যিকতা প্রযোজ্য হবে না। করোনায় আক্রান্ত দেশ থেকে আসা কূটনীতিক/কর্মীদের সেলফ কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক মিশনগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, বৈধ ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা তাদের ভিসার মেয়াদ দুই মাস পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ পাবে।