মঈন উদ্দিন খান বাদল। বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় নেতা, অনলবর্ষী বক্তা, সংসদ সদস্য, বীর চট্টলার গৌরব, আরও অনেক কিছুতেই তাকে সম্বোধন করা যায়। না ফেরার দেশে তিনি আজ থেকে থাকবেন। ইন্না-লিল্লাহে ওয়াইন্না ইলাইহে রাজিউন।মনে হচ্ছে, যেন আবারো পিতৃহারা হলাম। এভাবেই মূল্যায়ন করলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
সদ্যপ্রয়াত সাংসদ মঈন উদ্দীন খান সম্পর্কে উপমন্ত্রী তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘দু’বছর আগে হঠাৎ স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়েছিলেন যখন, তখন তার বন্ধু মহিউদ্দিন চৌধুরীও গুরুতর অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। খুব আফসোস করতেন বন্ধুকে দেখে যেতে পারেন নাই। অশ্রুসজল নয়নে স্মরণ করতেন। আজ থেকে আমরা তাকে স্মরণ করবো। চট্টগ্রামের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে কোথায় ছিল না তার গর্জন?
শিক্ষা উপমন্ত্রীর লেখায় আরও জানা যায়, ‘প্রথম তার সাথে আমার পরিচয় শৈশবে। এরশাদের দোর্দণ্ড শাসনের সময়। তৎকালীন পিজি হাসপাতাল, আজকের বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের রাজবন্দিদের কক্ষে। আমার বাবার প্রিজন সেলের সহবন্দি ছিলেন। এরশাদের সাথে আপস করে মন্ত্রী হতে পারতেন, কিন্তু বেছে নিয়েছিলেন বন্দি জীবন। আমাকে সমাজতন্ত্র শেখাতেন, দেখতেও ছিলেন স্টালিনের মতো, ইম্পোজিং ব্যক্তিত্ব। আমার বাবার সাথে হাস্যরস আর গভীর রাজনৈতিক আলোচনায় মগ্ন থাকতেন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কাছ থেকে শুনতাম। পরবর্তী সময়ে যখনই দেখা হতো, প্রতিবার তার কাছ থেকে শিখেছি। রাজনৈতিক আলোচনা যে শুধুই পদবির আর ক্ষমতার রাজনীতি নয় এবং রাষ্ট্রনীতি, আদর্শ, উন্নয়ন, এসবই হচ্ছে রাজনীতির মূল আলোচনা, বারবার তার সান্নিধ্যে এসে তা অনুভব করেছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি।’
‘বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে, তার সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে, সেই শৈশব থেকে দেখেছি অবিচল দৃঢ়তার সাথে তাকে বলতে। তিনি আর আমাদের মাঝে নাই। বাংলাদেশের রাজনীতি আরও একজন বিরল প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদকে হারালো, এক অপূরণীয় ক্ষতি। জাতীয় সংসদ আর জাতীয় রাজনীতি, হয়তো বা এই সিংহের গর্জন আর শুনবে না, কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ, আদর্শিক রাজনীতির এই সিংহ পুরুষকে আজীবন স্মরণ করবেন। বেঁচে থাকবেন আমাদের প্রিয় মঈন উদ্দিন খান বাদল, আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়।’
চট্টগ্রাম-৮ আসনের তিন বারের সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দীন খান বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ভারতের বেঙ্গলুরের নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তিনি গত ১৮ অক্টোবর থেকে সেখানে প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠির তত্ববধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে মরহুমের মরদেহ দেশে আনা হবে।