বিএনপির মূল শক্তি ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে চলছে তোড়জোড়। ২৭ বছর পর আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার পর গত ৪০ বছরের অর্ধেকের বেশি সময় কেটেছে পকেট কমিটির দুর্নাম নিয়ে। প্রতিটি কমিটি ঘোষণার পরেই বিশেষ প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে পকেট কমিটি হয়েছে বলে অভিযোগ করে দলের একটি অংশ বিদ্রোহ করে এসেছে। শনিবার (১৭ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন আনোয়ার আলদীন।
দলের নেতারা মনে করেন, বিগত সময়ে এভাবে পকেট কমিটি করায় ছাত্রদলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিকাশ ঘটেনি। বার বার কোটারি স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে থেকেছে। বিশেষ সিন্ডিকেটের কাছে বন্দি হয়ে পড়ে সংগঠনটি। এর মূলে ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি না হওয়ায়। যার বাস্তবতা দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচনে। এই নির্বাচনে সিন্ডিকেটের পছন্দমতো প্রার্থী দেওয়ায় ভরাডুবি হয় ছাত্রদলের। দল মনোনীত ভিপি প্রার্থী মাত্র আড়াই শতাধিক ভোট পেয়ে লজ্জাজনক পরাজয়ের শিকার হন। ডাকসুতে দলের একটি সিন্ডিকেটের প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় দলের অপর অংশটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া-প্রচারণা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। ছাত্রদলের অভিভাবক হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন। এর পরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন কমিটি পকেট নয়, কাউন্সিলরদের ভোটেই নির্বাচিত হবে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে এই সিদ্ধান্তেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় দলের একটি অংশ। নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে গত ১৫ জুলাই ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০০০ সালের আগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন এমন কেউ ছাত্রদলের কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু বয়সসীমা নিয়ে সংগঠনের একটি অংশ বিদ্রোহ করে। তাদের আন্দোলনে কাউন্সিল পিছিয়ে যায়।
বিএনপির এক নেতা বলেন, সমাধান না হলে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট আবারও পকেট কমিটি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারেক রহমানের দৃঢ় মনোভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে স্কাইপে মতবিনিময় করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। ফলে পুনঃতফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ ১৭-১৮ আগস্ট, জমা ১৯-২০ আগস্ট। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩১ আগস্ট। ২২-২৬ আগস্ট যাচাই-বাছাই শেষে ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ। ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটের জন্য প্রচার চালাতে পারবেন। এ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৪ সেপ্টেম্ব সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটগ্রহণ হবে। ছাত্রদলের ষষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত মঙ্গলবার এ কথা জানানো হয়।
জানা যায়, সবশেষ ১৯৯২ সালে পঞ্চম কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে রুহুল কবির রিজভী ও এম ইলিয়াস আলী যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর পরের সবগুলো কমিটিই ছিল ‘পকেট কমিটি’।
পুনঃতফসিল ঘোষণার পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নেতারা জেলায় জেলায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ তো আছেই। শুধু ভোটারই নয়, সংশ্লিষ্ট জেলা-মহানগর এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তারা।