‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে আমার বন্ধুরা অনেকেই চাকরির আবেদন করছে; কিন্তু আমি একই সঙ্গে শুরু করে এখনও অনার্স পড়ছি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার কারণে ক্লাস ও পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজটে পড়ে পরিবারের বোঝা হয়ে আছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অচলাবস্থার অবসান চাই।’
এমন কথা জানাচ্ছিলেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ফিসারিজ অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর ছাত্র শফিউল আলম। তিনি জানান, নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ ও ডিসেম্বরে রেজাল্ট হওয়ার কথা। কিন্তু দুই মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আন্দোলন এবং ক্লাস ও পরীক্ষা না হওয়ায় তারা সেশনজট ও শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকরা তাদের নিজেদের জন্য শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। একই কথা জানান একই ক্লাসের ছাত্র আরিফ সরকার, মো. মহিউদ্দিনসহ অন্যরা। ফিসারিজ অনুষদের লেভেল-২, সেমিস্টার-১ এর ছাত্র আখতারুজ্জামান বাবু জানান, লেখাপড়ার জন্য প্রতি মাসে বাড়ি থেকে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা নিতে হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া হচ্ছে না। উল্টো বসে বসে সময় নষ্ট হচ্ছে। বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত টাকা নিয়ে বসে বসে খেতেও লজ্জা লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকরা ছাত্রদের এ অবস্থার কথা ভাবলে- তারা অবশ্যই তাদের নিজেদের সংকট সুরাহা করে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু করতেন। কিন্তু তারা তাদের নিজেদের কথা ভাবলেও শিক্ষার্থীদের কথা ভাবেন না। শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১৪ নভেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। সেশনজটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকরা এ সংকট নিরসনে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। কবে নাগাদ ক্লাস ও পরীক্ষা চালু হবে তাও কোনো নিশ্চয়তা নেই। রোববার হাবিপ্রবিতে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সিঁড়িতে বসে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। প্রশাসনিক ভবনের বামদিকে নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৬১ জন সহকারী অধ্যাপক ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আর ডানদিকে প্রগতিশীল শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে একাত্ব ঘোষণা করে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করছেন। তবে অফিসে নেই ভিসি প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেম ও রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলম। এদিকে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতে বাধ্য হয়েই রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বের করে দিয়ে তালা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ক্লাস-পরীক্ষা চালু না করায় প্রশাসনকে দায়ী করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে বিকাল ৩টায় শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যা সমাধানের আলটিমেটাম দিয়ে তালা খুলে দেয়। ১৪ নভেম্বর থেকে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, সহকারী অধ্যাপকদের লাঞ্ছিত ও শিক্ষিকাদের শ্লীলতাহানিকারীদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টার বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন ৬১ জন সহকারী অধ্যাপক। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামও। এতে গত ২ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষক আন্দোলনে থাকায় অধিকাংশ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।