বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হলগুলোতে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের মারপিট, মাস্তানি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। ছাত্রলীগের মতাদর্শের বাইরে কেউ কথা বললেই তাকে নানাভাবে হেনস্থাসহ মারপিট করা হতো। ফলে রোববার রাতে আবরার ফাহাদকে যখন বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের ২০১১ রুমে মারধর করা হচ্ছিল- তখন সেটিকে সাধারণ ছাত্ররা নিত্যদিনের ঘটনা বলেই ধরে নিয়েছিল। ঘটনাস্থল পরির্দশনকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার (৯ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে নেয়ার পর প্রায় ৪/৫ ঘন্টা ধরে নির্যাতন চলে। কিন্তু এসময় তার আর্ত্মচিৎকার শুনে আশপাশের রুম থেকে কেউ এগিয়ে এলো না কেন? এসময় কি ছাত্রলীগ ক্যাডারারা ওই রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে মারধর করেছে -এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমন প্রশ্ন আমাদের মনেও জেগেছিল। কিন্তু হলের সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে এর যে জবাব পেয়েছি তা দুঃখজনক। তারা জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা হলগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হলের বিভিন্ন রুমে তারা যখন তখন মদের আড্ডা জমাতো। পাশাপাশি তাদের মতাদর্শের বাইরে কাউকে মনে হলেই তাকে যে কোনো রুমে নিয়ে মারধর করতো। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ভয়ে কেউ ‘টু’ শব্দটি করতো না।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা কি জানিয়েছে, এ ব্যাপারে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃতরা আবরারকে মারধরের কথা স্বীকার করেছে। তবে তাদের একজনের ভূমিকা ছিল একেক রকমের। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লাঠি দিয়ে প্রহার করে। কেউবা উপস্থিত থেকে মারপিটের দৃশ্য উপভোগ করে। ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। উল্লেখ্য, রোববার রাত তিনটার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতেই হলটির ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ময়নাতদন্তে তার মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।