দলীয় রাজনীতি শিক্ষকদের জন্য গর্হিত অপরাধ বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম। তার মতে, শিক্ষকরা দেশের জন্য, জনগণের জন্য আদর্শিক রাজনীতি করবেন। সেটা তাদের দায়িত্বেরও অংশ। তিনি বলেন, লোভের বশবর্তী হয়ে দলীয় রাজনীতি শিক্ষকদের জন্য নয়। এতে তাদের মর্যাদা ও অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতাও ক্ষুণ্ন হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের সম্মান করতেন। তাদের কথা ও মূল্যায়নকে গ্রহণ করতেন। সামরিক সরকারগুলোও শিক্ষক সমিতিকে ভয়ের চোখে দেখত। কারণ যে কোনো অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ শিক্ষকরাই করতেন। নব্বইয়ের পর থেকেই শিক্ষক সমিতিগুলো পুরোপুরি সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে গেছে।
অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম আরও বলেন, প্রথমে বিএনপি সরকার এগুলোকে দলীয়করণ শুরু করে, পরে আওয়ামী লীগও একই কাজ করে। তাই এখন আর কোনো ইস্যুতেই কোনো ধরনের প্রতিবাদ হয় না। বিভিন্ন লোভনীয় পদের জন্য শিক্ষক নেতারা কোনো ধরনের অন্যায়ের বিষয়েও কথা বলেন না। উপরন্তু তারা দলীয় বিভেদের রাজনীতিতে রাজনৈতিক কর্মীর মতো জড়িয়ে পড়ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ নষ্ট করছেন। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে অনেক স্থানে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে, আবার রাজনৈতিক মিল না থাকায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।
অধ্যাপক মন্জুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের রাজনীতির মূলে রয়েছে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, পিএসসি, ইউজিসি সদস্যসহ বিভিন্ন সরকারি পদে নিয়োগ লোভ। একজন উপাচার্যকে তার চাকরির মেয়াদ শেষে রাষ্ট্রদূত করা যে তার জন্য মর্যাদাহানি সেটাও কেউ বুঝছেন না। নির্বাচন এলেই এমপি নমিনেশনের জন্য শিক্ষকদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। যতদিন পর্যন্ত এসব বন্ধ না হবে ততদিন দলীয় লেজুড়বৃত্তিও বন্ধ হবে না। তাই নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এসব বন্ধ করার চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকেও শিক্ষার পরিবেশ ও জাতির স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনো শিক্ষককে তারা আর লোভনীয় পদগুলোতে নিয়োগ দেবে না এবং শিক্ষকদের দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করবে না।