অরিন্দম কহিলা - দৈনিকশিক্ষা

অরিন্দম কহিলা

অরিন্দমের-কলাম |

১।  প্রজ্ঞাপনটা কই গেলো? প্রজ্ঞাপন বাতিল বা সংশোধন করেই নির্বাহী আদেশ জারী করা শোভনীয়। 
নির্ধারিত তারিখের আগেই গার্মেন্টস, কারখানা, অফিস খুলছে। অথচ পরিবহন বন্ধ। একজন যাত্রী বলছিলেন, ‘যেভাবেই হউক আমাদের চাকরি বাঁচাতে হবে। তাই মরি বাঁচি কর্মস্থলে ছুটছি।’ এই আক্ষেপের বাক্যটি সরাসরি সরকারকে বিব্রত করে। এ কর্মে যারা বাধ্য করছে তারা সরকারের জনপ্রিয়তায় আঘাতের প্রচেষ্টা চালাতে পারে। প্রশাসনের কর্তাদের কিছু অতি মায়াবী অব্যবস্থাপনায় সরকারের সিদ্ধান্তগুলো সাংঘর্ষিক ও বিতর্কিত হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শুধু একটি নির্দিষ্ট সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দেখভাল করছে বলেই আপাত: দৃষ্টিতে মনে হয়। এটা বৃটিশ আমলের শোষণ শাসনের অংশ। ২৮ টি ক্যাডার সার্ভিসের চাকুরীর পদ এখানে সংরক্ষিত থাকলেও একটি বা দুটি বাদে কোনটির দেখভাল এখান থেকে হয়না। তাই, পদকও পাননা। জনপ্রশাসন পদক যখন একটি নির্দিষ্ট সার্ভিসের কর্তাদের দেয়া হয় তখন অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের আঁতে ঘা লাগে। গুড গভর্নেন্স এর জন্যই এই পদকটির নামকরণ পাল্টানো যেতে পারে। তা সম্ভব না হলে সব সার্ভিসের জন্য প্রচলন করা যেতে পারে। নইলে আমলাতন্ত্র তাঁর জৌলুস হারাতে বাধ্য। ভূমির ওপর খবরদারির জন্য একটি সার্ভিসের আমলারা খুবই শক্তভাবে বসেছেন। চিকিৎসক আর শিক্ষকদের উচ্চ মর্যাদায় আসীন করে অন্যান্য সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের একই প্রশিক্ষণ দিয়ে ভূমি প্রশাসনে পদায়ন করা হলে জবাবদিহিতা বাড়তো। অথবা একটি স্বতন্ত্র ভূমি সার্ভিস ক্যাডার চালু করা যেতে পারে।


২। ফেরী ঘাটের চিত্র অস্বাভাবিক। মহামারী আরও বেগবান করার জন্যই কি এই মহা আয়োজন? মানুষকে শৃঙ্খলায় আনার জন্যইতো প্রশাসন। বুর্জোয়াদের যদি বলা হতো, ডেটাবেইস অনুযায়ী গার্মেন্টস বা কলকারখানার কর্মীদের বিভিন্ন জেলা থেকে নিজস্ব বা ভাড়া করা যানের মাধ্যমে কর্মস্থলে আসতে হবে। প্রতিনিধি নিয়োগ করে এ কাজটি স্বাস্থ্যবিধি মানিয়ে করা যেত। প্রয়োজনে শ্রমিক বা কর্মীদের পরবর্তী মাসের বেতন থেকে যাতায়াতের এই টাকা কেটে রাখলেও কেউ আপত্তি করতেন না। কারণ, আমরা গরীবের রক্ত খাই, এটা সবাই জানি। দেশের ধনাঢ্যরা রপ্তানি রপ্তানি করে পাগল প্রায়। তাঁরা নিজেদেরও কখন যে পুরোপুরিই রপ্তানি করেছেন তা অনুভবই করেন না। না হলেতো এই মহামারীতে নিজেদের থলে থেকে কিছু বের করতেন। যাহোক, উপরের দিকে থুথু ফেললে নিজের গায়ে লাগে। আজ তাদেরকে এভাবে টেনে হিচড়ে শরনার্থীর মতো আনা হচ্ছে। কালতো ঐ মালিককেও করোনায় আক্রমণ করতে পারে। পুরো কারখানা করোনাময় হতে পারে। তখন কী হবে?

৩। আমি পার্টটাইম সুইপারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, লকডাউনে তাঁর কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা? উল্টো আমাকে প্রশ্ন করলেন কি সমস্যা স্যার? একমাস চলতে পারমু। তারপর আমাদের বাতিঘর শেখের বেটিতো আছেনই। খুব ভালো লাগলো শুনে। এরপর আমাদের পার্ট টাইম মেইড সার্ভেন্টকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, লকডাউনে খাওয়া-দাওয়ার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা? বাড়িওয়ালার কি খবর? সোজাসাপ্টা উত্তর,’স্যার যে কি কন্! উনার এহনতো পোয়াবাড়ো, দিন-রাইত টিপি দেহেন, মোবাইল টিপেন, আর খালি ধান্দা কহন কাউন্সেলরের লোক মোবাইল লম্বরে ফোন দিবো!’

একজন মোটরচালককে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ড্রাইভার সাহেব, আপনার দিনকাল কেমন যাচ্ছে? স্যার, কোন অসুবিধা নাইক্যা, মাঝখানের ১৫ দিন এক সাবের গাড়ি ভাড়া নিছিলাম, ‘সাবেরে দিছি ২২ হাজার আর আমি নিছি ৩০ হাজার আবার প্রধানমন্ত্রী দিসে ২৫০০’।

আমাদের শ্বশুড় বাড়ির জেলার একজন গার্মেন্টসে চাকুরী করেন। ঈদের আগে ছুটিতে গেছেন। ফোনে জিজ্ঞাসা করলাম,’ক্যাংকা আচু?’ হাসি দিয়ে বললেন, ‘ভালো আছি, মালিকরা হামাক খালি কষ্ট দেয়। ছুটিত আচ্চি তাও কারখানাত থেকে ফোন দেয়, হামাগের আশেপাশে করোনা হছে’। তাহলে ১৫ দিন বা ১ মাসের লকডাউনেতো কোন সমস্যা নাই। সমস্যা যদি দু’একটু হয়-ই- তাহলে দু’একদিন না হয় একটু কচুঘেচু বা শাকপাতা খেয়েই থাকলাম।জনগণকে এজন্য যুদ্ধের বার্তা দিতে হবে। জরুরী অবস্থায় যা হয় তা করলেই আমরা এই করোনা যুদ্ধে জিতবো।

৪। হাসপাতালে স্বজনের আহাজারি বেড়েছে। বিভীষিকাময় পরিবেশে মানুষগুলো ডুকরে কাঁদছে। মিডিয়ায় সেটা দেখলে কেউ অহেতুক বলতো না যে, ‘খাবার নাই, কাজ নাই তাই বাইরে যাই’। 

লকডাউনের একদিন দুইদিন না যেতেই কিছু মিডিয়া মানবদরদী হয়ে যায়। কতিপয় মানুষের কৃত্রিম হাহাকার দেখায়। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে। করোনার ভয়াবহতা প্রচারে মসজিদের খাদেম, মুয়াজ্জিনই যথেষ্ট। প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করে চমৎকার ফলাফল পাওয়া যেতো। যাহোক, সোস্যাল সেফটিনেটের আওতায় কোটি মানুষ সরকারি সহায়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এছাড়াও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছেন। তাহলে কেন এতো খাই খাই, নাই নাই? এটা কি সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণার শামিল নয়?

অরিন্দম

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067780017852783