ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল দপ্তর রাজভবনে আজ বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ নিয়ে এই রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য শপথ নিচ্ছেন। তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি এ রাজ্যে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর এ পদে বসছেন। সাংবিধানিক আইন অনুসারে মমতাকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাজ্যের কোনো একটি আসনে জয়ী হয়ে আসতে হবে। করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ উপলক্ষে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান হবে। এদিকে, নির্বাচনোত্তর চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এর আগে সোমবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মমতা। ওই সাক্ষাতে শপথের দিন নির্ধারিত হয়। এরপর ঠিক হয়, ৬ ও ৭ মে নবনির্বাচিত বিধায়করা শপথ নেবেন। ৯ মে রাজভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে।
আগেই জানানো হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিদায়ী স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের পরিষদীয় দলের নেতা মনোজ টিগ্গা, বিদায়ী বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী, তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর প্র্রমুখকে।
কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে একেবারে অনাড়ম্বরভাবে শপথ অনুষ্ঠান হবে। এজন্য খুব কমসংখ্যক প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এর আগে সোমবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে প্রথা মেনে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে রাজ্যপাল তাকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত ওই পদে থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয় রোববার। আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, বেসরকারিভাবে ঘোষিত চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে ২১৩ আসনে। ২০১৬ সালে দলটি পেয়েছিল ২১১ আসন। এবার বিজেপি পেয়েছে ৭৭ আসন। গতবার পেয়েছিল তিনটি আসন। ফুরফুরার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফ পেয়েছে একটি আসন। অন্যান্য দল থেকে পেয়েছে একটি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নির্বাচনোত্তর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে। ফলাফল প্রকাশের দিন থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এই ১৪ জনের মধ্যে বিজেপির ৯ জন, তৃণমূলের চারজন, আইএসএফের একজন রয়েছেন। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনোত্তর সহিংসতা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে ফোন করেন মোদি। পরে রাজ্যপাল ধনখড় টুইট বার্তায় লিখেছেন, 'রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ফোনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।'
ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের কর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। গতকাল ফের সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পরে বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, রাজ্যে একাধিক জায়গায় তাদের দলের কর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
অন্যদিকে, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় মঙ্গলবার সকাল থেকে একাধিক টুইটে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেখানে প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। টুইটে ট্যাগ করেন কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশকেও। প্রশ্ন করে বলেন, বিদেশে অবস্থিত ভারতীয়রা প্রশ্ন তুলছেন, 'ভোট-পরবর্তী সহিংসতা পশ্চিমবঙ্গেই কেন হবে? কেন এভাবে গণতন্ত্রকে হেনস্তা করা হবে?'
নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ও প্রাণহানির নিয়ে আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে প্রতিবেদন তলব করেছে। পরে রাজ্যপালও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নির্বাচন-পরবর্তী সংঘর্ষে প্রাণহানির বিষয় নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন।