আবরার হত্যায় কিছু প্রশ্ন - দৈনিকশিক্ষা

আবরার হত্যায় কিছু প্রশ্ন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বুয়েটের আবরারকে একদল নরপিশাচ নৃশংসভাবে খুন করার ঘটনায় কার্যত পুরো দেশ হতভম্ব। ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি, পত্রিকা, বাসাবাড়ি, চায়ের দোকান—সব জায়গায় একই আলোচনা। আবরার, আবরার, আবরার! এমন নৃশংস অপরাধের প্রবণতা যেমন আজকাল বাড়ছে, তেমনি এসব ঘটনা গগনবিদারি মিডিয়া অ্যাটেনশন পাওয়ার হারও সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ছে। প্রতিবার মিডিয়া অ্যাটেনশন পাওয়া যে কোনো ইস্যুতেই ভাবি, এই বুঝি কিছু একটা হবে। কিন্তু কপালে কাঁচকলা ছাড়া বেশি জোটে কমই। সমস্যার সমাধান বা বিচার কোনোটাই জোটে না। তার পরও কেন গণমাধ্যমের এত তেজোদীপ্ত হুংকার? ভাইরাল হলেই বিচার হবে, নয়তো হবে না—এ দৃষ্টিভঙ্গি কেন জন্মাল? আবরারের নিউজ ৭ তারিখ দুপুরে প্রথম যখন পাই, অজান্তেই দুই চোখ ভিজে উঠেছিল। সেই থেকে কোনো প্রকার খবর দেখতে পারছি না। অনেককেই দেখেছি এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ঘুমাতে পারছে না। আবরারকে বোধহয় সবাই পরিবারের একটা অংশ ভেবেই এতটা ব্যথিত হয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, আবরারের হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের প্রতিবাদের কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসার ফল আবরারের মৃত্যু। কাল আবরারের মতন অন্য কেউ একই ফল ভোগ করবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? আবরারের মৃত্যু আমাদের কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করে দিয়েছে। প্রশ্নগুলো করে যাই। আবরারের মৃত্যুতে গগনবিদারি প্রতিবাদ যেদিন নিস্তব্ধতায় মিলিয়ে যাবে, তখন উত্তরগুলো মিলিয়ে নেব।

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বলা হয়। মুক্তচিন্তার আতুড়ঘর বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুটি কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত মত প্রকাশ-সংক্রান্ত কিয়দংশ আলোচনা হলেও বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুক্তচিন্তার অধিকার নিয়ে কতজন ভেবেছে? কতজন মুক্তচিন্তক বের হচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে? ছাত্ররাজনীতি বৈধ করা হয়েছে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির জন্য। কিন্তু কতজন নেতা ঐ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা আর পড়াশোনার মানে সেরা র্যাংকিংয়ে নেই, নেতৃত্ব তৈরিতে অবদান নেই, মুক্তচিন্তক তৈরি করতে পারে না—তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেকার তৈরি ছাড়া অবদানটা কী?

২. ছাত্ররাজনীতিকদের হাতে নির্যাতনের ঘটনা কি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা? নিঃসন্দেহে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে যাচ্ছে। তার কয়টা লাইমলাইটে আসছে? ঘটনা ঘটার পরিমাণের চেয়ে প্রকাশের সংখ্যা নগণ্য। ক্ষমতাসীন দলের লিয়াঁজো ছাত্রসংগঠনের হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকায় সামান্য থেকে সামান্যতম ঘটনায় যে কেউকে বেধড়ক পিটুনি দিতে তারা ছাড়ে না।

৩. ক্যাম্পাসে মুক্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, ছাত্ররা নানাভাবে অনিয়মের শিকার, কিন্তু এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা কী? পিতৃতুল্য শিক্ষকদের আচরণে গোটা জাতির মাথা বারবার হেঁট হয়ে আসে। বাবা-মায়ের অবর্তমানে যারা শিক্ষার্থীদের রক্ষাকবচ হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা, সেসব শিক্ষকের এহেন কর্মকাণ্ড কি তাদের লজ্জিত করে না? মোটা দাগে ছাত্র-শিক্ষক শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্কের ঐতিহ্য যে আজ ধ্বংসের পথে, তার পরও কি শিক্ষকেরাও রাজনৈতিক দলীয়করণ নিয়ে পড়ে থাকবেন?

যুগ যুগ ধরে ক্যাম্পাসগুলোতে যে অনিয়মের আখড়া হিসেবে গড়ে তুলেছে ক্ষমতাসীন দলগুলো, তারই সর্বশেষ সংযোজন এই আবরার। খুনিরাও আবরারের বড়ো ভাই বা বন্ধু। তারাও আবরারের মতো সাধারণ ছাত্রছাত্রী। আবরারের খুনিদের মতো আরো অনেককে দিয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়ো বড়ো রাজনৈতিক দল যে ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করেছে, তারই সামান্য বহিঃপ্রকাশ আবরারের নৃশংস খুন। তাদের হাতে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হয়ে যাচ্ছে অনেক ছাত্র-শিক্ষক, কিন্তু তার কয়টি ঘটনা সামনে আসছে? এখন মোটাদাগে ছাত্রলীগের নাম সামনে এলেও যে সময় যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, ক্যাম্পাসে তাদের দুর্দান্ত দাপট থাকে, সে কথা ওপেন সিক্রেট। এই দাপুটে অপরাজনীতির শৃঙ্খলে বেড়ি পড়াবে কে? আবরারসহ দেশে সংঘটিত প্রতিটি হত্যার বিচারের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা সমানভাবে প্রতিটি খুনের বিচার চাই। ওপরের প্রশ্নগুলোর যোগ্য উত্তর চাই রাষ্ট্রের কাছে।

মো. রহমত উল্লাহ :শিক্ষার্থী, মাস্টার্স ইন পাবলিক হেলথ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067479610443115