চার দিনের ব্যবধানে আবারও ফেসবুকে বিভ্রাট। বাংলাদেশ সময় গত শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিট থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার ও ওয়ার্কস্পেসের। দেশে গভীর রাতের এই বিপর্যয় তেমন টের পাওয়া না গেলেও অন্যান্য দেশের ব্যবহারকারীদের জন্য বিষয়টি বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। যেকোনো অ্যাপে বিভ্রাট ট্র্যাক করে যে ডাউনডিটেক্টর, তাতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। আবারও ক্ষমা চাইতে হয় ফেসবুককে। বিবৃতি দিয়ে ফেসবুকের তরফে বলা হয়, ‘গত কয়েক ঘণ্টায় যাঁরা আমাদের প্রডাক্ট ব্যবহার করতে পারেননি তাঁদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ ইনস্টাগ্রামও পৃথকভাবে ব্যবহারকারীদের ধৈর্যের জন্য ধন্যবাদ জানায়।
তবে ফেসবুকের মতে, শুক্রবারের এই বিভ্রাট গত সোমবারের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না। গত সোমবারের সমস্যা সম্পর্কে ফেসবুক তাদের কারিগরি ত্রুটিকে দায়ী করে জানিয়েছিল, যে ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ফেসবুকের তথ্যভাণ্ডারের সংযোগ তৈরি হয়, সেই সিস্টেমের (ব্যাকবোন রাউটার) কনফিগারেশনে কিছু পরিবর্তন করার কারণে বিশ্বব্যাপী এই সমস্যা তৈরি হয়।
এদিকে সর্বশেষ বিভ্রাট সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, ওই বিপর্যয়ের সময় অনেক ব্যবহারকারী তাঁদের ইনস্টাগ্রাম ফিড লোড করতে পারছিলেন না এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠাতে পারছিলেন না। এ নিয়ে নানা অভিযোগ টুইটারে শেয়ার হতে থাকে। এক টুইটার ব্যবহারকারী লেখেন, ‘মনে হচ্ছে ফেসবুক এক সপ্তাহে মাত্র তিন দিন কাজ করে। সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার এটি বন্ধ।’ আরো একজন লেখেন, ‘ইনস্টাগ্রামে কী হচ্ছে?’ একজন ব্যবহারকারী কার্টুন চরিত্র বার্ট সিম্পসনের একটি ছবিসহ টুইট করে লেখেন, ‘চার দিনও হয়নি কিন্তু এর মধ্যে আবার ডাউন ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ!’
গত সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১০টার কাছাকাছি সময় থেকে রাতের শেষ প্রহর পর্যন্ত ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ ফেসবুকের মালিকানাধীন সব সেবা বন্ধ ছিল। এতে বিশ্বে বিশাল এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রায় ৩০০ কোটি গ্রাহকই শুধু ভোগান্তিতে পড়েননি, এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫১ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকারও বেশি কমে যায়। এই বিপর্যয় তাঁকে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ৪ নম্বর থেকে ৫ নম্বরে নামিয়ে দেয়।
এ আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও মার্ক জাকারবার্গ এখন তাঁর সাবেক সহকর্মীদের অভিযোগের মুখে। ফেসবুক ও সংশ্লিষ্ট অ্যাপগুলো শিশুদের মধ্যে বিভেদ বাড়াচ্ছে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ফেসবুকের সাবেক প্রডাক্ট ম্যানেজার ফ্রান্সেস হাউগেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের একটি কমিটির কাছে দেওয়া বক্তব্যে গত মঙ্গলবার ফেসবুকের নানা অসংগতির কথা তুলে ধরেন ৩৭ বছর বয়সী হাউগেন। তিনি বলেন, ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ শুধু মুনাফার দিকেই নজর দিচ্ছেন। ফলে প্ল্যাটফর্মটি শিশুদের ভয়ানক ক্ষতি করার পাশাপাশি বিভাজনকেও উসকে দিচ্ছে। এ বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি মার্কিন আইন প্রণেতাদের ফেসবুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজিও জানান।
এই পরিস্থিতে ফেসবুকের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ, কৌতূহল সারা বিশ্বে। টাইম ম্যাগাজিনের সব শেষ সংখ্যার প্রচ্ছদে জাকারবার্গের ছবিতে তাঁর মুখের ওপর অ্যাপ ডিলিট করার আইকন বসিয়ে একটি ইলাস্ট্রেশন ছাপানো হয়। ম্যাগাজিনটিতে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, ‘ফেসবুকের আগামী নির্দেশনা কী হবে আমরা জানি না। তবে জায়ান্ট কম্পানিটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ যে দিন দিন বাড়ছে, তা বেশ পরিষ্কার।’