বাংলাদেশে ইসলামী গবেষণা বা শিক্ষার প্রসারে ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার দেশে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৭ সালের শুরুর দিকে মক্কায় অনুষ্ঠিত প্রথম মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান প্রত্যেক মুসলিম দেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করেন। পরবর্তীতে প্রস্তাবটি গৃহীত হলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও একটি আন্তর্জাতিকমান সম্পন্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এম এ বারীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির প্রস্তাবিত রিপোর্টের ভিত্তিতে ২২ নবেম্বর ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সরকার কুষ্টিয়ার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে স্থান পরিবর্তনসহ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করে ১৯৮৫ সালে। প্রথম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে থিওলজি এ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের অধীনে আল কুরআন-ওয়া উলুম কুরআন ও উলুমত তাওহীদ ওয়াদ্ দাওয়াহ নামে দুটি বিভাগ এবং মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থপানা বিভাগ নামে দুটি বিভাগে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ, ১টি ইনিস্টিটিউট, প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী, ৪০৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ৩২০ জন কর্মকর্তা, ১৮১ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ৩০০ জন সাধারণ কর্মচারী নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম।
দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়টি ২২ নভেম্বর ৪১ বছর শেষে ৪২ বছরে পদার্পণ করছে। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে ১৭৫ একর আয়তনের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টি প্রশাসনিক ভবন, ৬টি একাডেমিক ভবন, ৫টি ছাত্র হল, ৩টি ছাত্রী হল, ১টি অত্যাধুনিক মিলনায়তনসহ মফিজ লেক রয়েছে। এছাড়াও বর্তমান ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রজেক্টের অধীনে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত বহিরাবরণ অনেকাংশেই পাল্টে দেবে বলে আশাবাদী সকলে। বর্তমানে প্রায় ৪০ জন বিদেশী শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম সংবাদকে বলেন, আমার মূল পরিকল্পনা এ বিশ্ববিদ্যালয় কে একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা।
এখানে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি আর্থিক সন্নিবেশ সুনিশ্চিত করা।
তিনি আরও জানান, আমার একার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সার্বিক বিষয় গুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্টেক হোল্ডারদের সহযোগিতা।