এই গ্লানি কোথায় রাখি? - দৈনিকশিক্ষা

এই গ্লানি কোথায় রাখি?

মুহম্মদ জাফর ইকবাল |
আমি প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর পত্র-পত্রিকায় লিখি, এই সপ্তাহের জন্যেও লিখতে বসেছিলাম, সবেমাত্র একটা ইলেকশান শেষ হয়েছে, মোটামুটি সবাই জানতো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট জিতে আসবে কিন্তু ফলাফল দেখে আমরা সবাই কম বেশি চমকে উঠেছি। সত্যি সত্যি দেশের সব মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষে চলে গিয়েছে না কি এর মাঝে অতি উত্সাহী মানুষের অবদান আছে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। সবকিছু মিলিয়ে আমি আমার নিজের মতো করে কিছু একটা লিখে প্রায় শেষ করে এনেছি তখন হঠাত্ করে সংবাদপত্রে একটা সংবাদে চোখ আটকে গেল।
 
নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকাতে চার সন্তানের জননীকে ভোট দেওয়া নিয়ে মতানৈক্যের কারণে গণধর্ষণ করা হয়েছে। (আজকাল প্রায়ই গণধর্ষণ শব্দটি চোখে পড়ে কিন্তু এখনো আমি এটাতে অভ্যস্ত হতে পারিনি বাংলা ভাষায় এর চাইতে ভয়ঙ্কর কোনো শব্দ আছে কী না আমার জানা নেই।) ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত বিজয়ী হওয়ার পর আমরা অনেকবার এই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি, আমি ধরেই নিয়েছিলাম সেটি এখন অতীত। এখন এটি আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার পর এটি ঘটেছে, এ রকম শুধু একটি ঘটনার খবরই এসেছে কিন্তু একটি ঘটনাই-বা কেন ঘটবে?
 
খুবই স্বাভাবিকভাবে সেই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দাবি করছেন যে এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো যোগাযোগ নেই। ধর্ষিতা জননী কিন্তু তা বলছেন না, তিনি রুহুল আমীন নামে সুনির্দিষ্ট একজন মানুষের নাম উল্লেখ করে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তার নিরক্ষর স্বামী, স্কুলপড়ুয়া মেয়েসহ সবাইকে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ করার জন্যে দশ বারোজন মানুষ বাইরে নিয়ে গেছে। আমি কী অবলীলায় বাক্যটি লিখে ফেললাম কিন্তু কেউ কি কল্পনা করতে পারবে এই বাক্যটিতে যে কথাগুলো বলা হয়েছে সেটি কী ভয়ঙ্কর?
 
অভিযোগ হলো, রুহুল আমীন নামক যে মানুষটির নির্দেশে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধর্ষিতা জননী অভিযোগ করেছেন তাকে বাঁচিয়ে নয়জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এই ঘটনাটির সাথে রাজনীতি বা নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। আমরা কেন ধর্ষিতা জননীর কথা বিশ্বাস না করে পুলিশের কথা বিশ্বাস করব?
 
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের একজন নিরক্ষর স্কুটার চালকের স্ত্রী নিশ্চয়ই গুরুত্বহীন একজন মানুষ। যার নির্দেশে প্রায় এক ডজন মানুষ এই গুরুত্বহীন একজন জননীকে ধর্ষণ করে সে নিশ্চয়ই অনেক ক্ষমতাশালী। নির্বাচনে বিজয়ের পর সে নিশ্চয়ই নিজেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করছে। কাজেই তুচ্ছ একজন মহিলাকে প্রতিপক্ষকে ভোট দেওয়ার ‘অপরাধে’ এ রকম একটি শিক্ষা দেওয়া নিশ্চয়ই খুবই মামুলি ব্যাপার। এটা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হওয়াটাই হয়তো বিস্ময়কর।
 
কিন্তু সদ্য বিজয়ী হওয়া আওয়ামী লীগের জন্য এটি একটি গ্লানি, গ্লানিটি তুচ্ছ নয়। এই গ্লানি আকাশ ছোঁয়া, সদ্য নির্বাচিত রাজনৈতিক দলটি সরকার গঠন করে সবার আগে এই গ্লানি থেকে তাদের মুক্তি পেতে হবে। ধর্ষিতা এই জননী, তার নিরক্ষর স্বামী, স্কুলে পড়ুয়া অসহায় কয়েকটি ছেলে-মেয়ে যতক্ষণ আমাদের ক্ষমা না করবে ততক্ষণ আমরা কিছুতেই গ্লানিমুক্ত হতে পারব না।
 
আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই বিচলিত এবং বিষণ্ন, আমি কিছু লিখতে পারছি না। পাঠকেরা আমাকে ক্ষমা করবেন।
 
লেখক: শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065550804138184