এসএসসি পরীক্ষা বদলে যাচ্ছে - দৈনিকশিক্ষা

এসএসসি পরীক্ষা বদলে যাচ্ছে

রুম্মান তূর্য |

গতানুগতিক মুখস্থ জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করেছে সরকার। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে দীর্ঘ সময় ধরে প্রচলিত এসএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বদলে যাচ্ছে। ৩৩ দিনের দীর্ঘ পরীক্ষা সূচির বদলে নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজনে সময় লাগবে দশদিন। সহস্রাধিক নম্বরে প্রচলিত পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে এ পরীক্ষা হবে মাত্র ২৫০ নম্বরে। 

কোনো বিভাগ বিভাজন ছাড়াই শুধু দশম শ্রেণির সিলেবাসে মাত্র ৫ বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে শিক্ষার্থীদের। জিপিএ-৫ এ মূল্যায়নের পরিবর্তে জিপিএ-৪ এর হিসেবে শিক্ষার্থীদের ফল দেওয়া হবে। ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা হওয়ার রীতি ভেঙে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নতুন কারিকুলামে এসএসসি পরীক্ষা হবে বছরের শেষে। সম্পূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতিসহ পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্যই বদলে যাচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমে।

সম্প্রতি নতুন এ শিক্ষাক্রম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করা হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাক্রমটি অনুমোদন দিয়েছেন। 

শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নতুন কারিকুলামে এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধুমাত্র দশম শ্রেণির সিলেবাসের ওপর। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী কর্মকর্তারা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে নতুন শিক্ষাক্রমের খসড়া তৈরি করেছেন।

যেভাবে হবে সিলেবাস ও নম্বর বিন্যাস :

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাত্র ১০টি বিষয় পড়তে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভাগ বিভাজন থাকবে না। এ বিষয়গুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

এ বিষয়গুলোর মধ্যে পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের। শুধুমাত্র দশম শ্রেণির সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হবে। এ বিষয়গুলোর মধ্যেও ৫০ শতাংশ নম্বর শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে সামষ্টিক মূল্যায়নে বা পরীক্ষার মাধ্যমে। আর বাকি অর্ধেক নম্বর শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে শিখনফল মূল্যায়নের মাধ্যমে।

আর জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে কোনো পরীক্ষা হবে না, এসব বিষয়ে পুরোটাই মূল্যায়ন হবে শিক্ষার্থীদের শিখনফলের ভিত্তিতে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষা হবে আনন্দদায়ক। কম বিষয়ে পরীক্ষা হাওয়ায় পরীক্ষা নিয়ে কোন ভয় থাকবে না। নম্বর পাওয়ার থেকে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনে মনোযোগী হবে। প্রচলিত পদ্ধতি থেকে অনেকটাই বদলে যাবে নতুন কারিকুলামে এসএসসি পরীক্ষা। 

বছরের শেষে এসএসসি পরীক্ষা :

অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন কারিকুলামে প্রচলিত ধারায় ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। বছরের শেষে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দশম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু হবে। সে বছরের শেষেই এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। 

দশ দিনে পুরো পরীক্ষা, সময়ও কমবে :

এনসিটিবির এ সদস্য জানান, নতুন কারিকুলামে এসএসসি পরীক্ষা হবে মাত্র পাঁচ বিষয়ে। তাই এক সপ্তাহেই পুরো পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া যাবে। শিক্ষার্থীদের যদি একটু বন্ধ দিয়ে পরীক্ষা দিতে হয় সেক্ষেত্রে সময় লাগবে দশ দিন। এখন এসএসসি পরীক্ষা নিতে সময় লাগে ৩৩ দিন।

তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে আরও বলেন, যেহেতু সামষ্টিক মূল্যায়ন ও শিখন ফলে অর্ধেক অর্ধেক নম্বর থাকছে, তাই পরীক্ষার নম্বরও কমবে। সুতরাং পরীক্ষার সময়ও কমতে পারে। সেক্ষেত্রে এক বা দেড় ঘণ্টা সময়েই পরীক্ষা নেওয়া যাবে।

জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে জিপিএ-৪:

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের গ্রেডিং পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত ৪ পয়েন্টের হিসেবে শিক্ষার্থীদের গ্রেড দেওয়া  হবে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে জিপিএ-৪ এর প্রচলন হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে জিপিএ-৪ প্রচলিত। 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে নতুন শিক্ষাক্রমের এসএসসি পরীক্ষা থেকেই এ গ্রেডিং পদ্ধতি বাস্তবায়ন শুরু হবে। নতুন এ পদ্ধতির ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে শিক্ষার্থীদের ফল সমন্বয়ের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

পরীক্ষার উদ্দেশ্য বদলাচ্ছে :

অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রচলিতভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের কিছু পরীক্ষা নিয়ে তার ভিত্তিতে নম্বর দিয়ে তাদের মূল্যায়ন করি। কিন্তু এর পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সারা বিশ্বে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয় তাদের অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে। শুধুমাত্র পরীক্ষা কখনো শিক্ষার্থীদের অর্জিত দক্ষতার মাপকাঠি হতে পারে না।

উদাহরণ টেনে তিনি আরো বলেন, কোনো শিক্ষার্থী শুদ্ধভাবে লিখতে পারলেও সে শুদ্ধভাবে উচ্চারণের দক্ষতা অর্জন করেছে কিনা তা তার খাতা দেখে বিচার করা যাবে না। সেজন্য শিখন ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন জরুরি। এ জন্যই পদ্ধতিতে পরিবর্তন। এর ফলে, শিক্ষা ও পরীক্ষার উদ্দেশ্য বদলে যাবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার উদ্দেশ্য বদলাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট স্তরে একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করাতে চাই। সেটিই শিক্ষার মূল লক্ষ্য। আমরা অ্যাসেসমেন্ট অব লার্নিংয়ের প্রচলিত ধারণায় বিশ্বাসী ছিলাম। সে ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অ্যাসেসমেন্ট ফর লার্নিং হওয়া উচিত, শেখার জন্য মূল্যায়ন।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035028457641602