কবজি দিয়ে পরীক্ষায় লিখে জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে হার মানিয়ে অবশেষে মাধ্যমিক (এসএসসি) এসএসসি পাস করেছেন মোবারক আলী। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৩ দশমিক ৮৪ পেয়ে দিনমজুর বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন মোবারক।
দুটি হাতের আগুল না থাকলেও দুই হাতের কবজি দিয়েই কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (পাইলট) কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মোবারক আলী।
এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মোবারক আলী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর এলাকার দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে।
২০১৮ সালে কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হাতের কবজি দিয়ে লিখে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে।
কবজি দিয়ে লিখে এসএসসি উত্তীর্ণ হওয়া মোবারক আলী সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, আমি যেন পড়াশুনা করে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। আমার দিনমজুর বাবা-মায়ের স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর। কিন্তু সংসারের খরচ চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, তার পক্ষে পড়াশুনার খরচ জোগান দেওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।
মোবারক আলীর বাবা এনামুল হক বলেন, ছেলে আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। মোবারক আলীকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন সে যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় চাহিদা মোতাবেক পড়াশুনার খরচ মেটাতে পারি না। তবে মোবারক যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে পারে।
মোবারক আলীর মা মরিয়ম বেগম বলেন, তারা দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড়। প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকায়, সে নিজের কাজকর্ম নিজেই করতে পারে। হাতের কবজি দিয়ে লিখে এসএসসি পাস করে সে সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক বলেন, মোবারক শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও যথেষ্ঠ মেধাবী। তার এসএসসির ফলাফলে উচ্চতর গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞানে ‘এ প্লাস', বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, রসায়ন, আইসিটি ও প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে ‘এ’, এবং গণিত বিষয়ে ‘এ মাইনাস’ এবং অন্য দুটি বিষয়ে 'বি' ও একটি বিষয়ে 'ডি' পেয়েছে। তার প্রবল ইচ্ছা শক্তি সাফল্য বয়ে এনেছে এবং উচ্চশিক্ষায়ও আরো ভালো করবেন।