গবেষণাহীন ধূসর গন্তব্য - দৈনিকশিক্ষা

গবেষণাহীন ধূসর গন্তব্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শতবর্ষে পা রাখা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা নিয়ে 'প্রশ্ন' অনেক দিনের। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণার মান ধরে রাখতে না পারায় যেখানে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে স্থান করে নিতে পারছে না, সেখানে আমরা দেখছি উল্টো গবেষণায় বরাদ্দ কমাচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠ। শুক্রবার সমকালে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট সংক্রান্ত খবরে দেখা যাচ্ছে, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বরাদ্দের বাজেট পেশ করা হলেও গত দুই বছরের তুলনায় এবার গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমে গেছে। বলাবাহুল্য, বৃহস্পতিবার সিনেটের যে অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য গবেষণায় বরাদ্দ মোট বাজেটের দশ শতাংশে উন্নীত করার ওপর গুরুত্ব দেন, ঠিক সেই অধিবেশনেই দেখা গেল, গত বছর গবেষণা খাতে যেখানে পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ ছিল, এবার সেটি নেমে এলো চার শতাংশে! স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষের কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। আরও আশ্চর্যের বিষয়- যেখানে গবেষণায় বরাদ্দ কম বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কম হচ্ছে, গবেষণার মান ঠিক থাকছে না বলে অভিযোগ, সেখানে আমরা দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত অর্থবছরে গবেষণার পুরো টাকা খরচও করতে পারেনি! তাহলে কি এ জন্যই এবার গবেষণায় অর্থ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে? শনিবার (২৫ জুলাই) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, অথচ আমরা জানি তহবিলের অভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য বিভাগেই সুসজ্জিত পরীক্ষাগার নেই। আমরা দেখছি, অক্সফোর্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান বিশ্বের অভিন্ন দুর্যোগ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কারে প্রতিযোগিতা করছে, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কী ভূমিকা পালন করছে? একটি সংবাদমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন অধ্যাপক বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারগুলো ইবোলা, ডেঙ্গু বা কভিড-১৯-এর মতো অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাস নিয়ে গবেষণার জন্য উপযুক্ত নয়। পরীক্ষাগারের জন্য প্রয়োজনীয় রি-এজেন্ট ও যন্ত্রপাতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত বাজেট দিয়ে সম্ভব নয়। তাহলে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান গবেষণায় পুরো অর্থ খরচ করতে পারছে না। কেনই-বা গবেষণায় বরাদ্দ কমাচ্ছে। আর এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মান রক্ষা ও বিশ্ব মানে উন্নীতকরণের স্বপ্ন দেখছে সবাই!

এটি অনস্বীকার্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের সব ক্রান্তিকালে ত্রাতার ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি তার প্রধান কাজ জ্ঞানসৃষ্টি তথা শিক্ষা ও গবেষণায় যথাযথ অবদান রাখতে না পারে, সেক্ষেত্রে দুঃখজনকভাবেই আমাদের পিছিয়ে থাকতে হবে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বুঝতে হবে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকাও অনন্য। নিজেদের গবেষণায় নিয়োজিত রাখা ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাজ। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এর বিপরীতে উল্লেখযোগ্য শিক্ষক লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হওয়ায় গবেষণা থেকে দূরে সরে গেছেন। অনেক ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ও পদোন্নতিও রাজনৈতিক বিবেচনায় হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের নেতিবাচক খবরে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও গবেষণার দিক থেকে অবশ্যই উদ্বেগজনক।

আমরা মনে করি, এখনও সময় আছে, দেশ ও জাতির স্বার্থেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হূত গৌরব ফেরাতে হবে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থী উভয় যোগ্য। প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা। গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ বলে এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতেই হবে। গত বছর যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বরাদ্দে পাঁচ শতাংশ গবেষণায় ছিল, এবার সেখানে তার চেয়ে বেশি হওয়া জরুরি। গবেষণায় ব্যয় কমানো কোনোভাবেই সুলক্ষণ নয়। আমাদের বিশ্বাস, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করবে। গবেষণায় বেশি বরাদ্দের পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থ যেন যথাযথভাবে ব্যয় হয় তাও দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেবল সরকারি বরাদ্দই যথেষ্ট নয় বরং উন্নত বিশ্বের মতো বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা ভাবা দরকার। আমরা চাই শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন যে 'মাস্টার প্ল্যান' করার কাজ হাতে নিয়েছে সেখানে গবেষণা থাকুক সর্বাগ্রে।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034260749816895