তবে চলুক অনলাইনে ক্লাস! - দৈনিকশিক্ষা

তবে চলুক অনলাইনে ক্লাস!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনার পরিস্থিতি ক্রমে অবনতি হচ্ছে; কিন্তু  জীবন, জীবিকা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতেই হবে। তাই করোনারকালীন স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম-কানুন যতটুকু সম্ভব মেনে চলে কিছু কিছু অফিস-আদালত, কল-কারখানা সীমিত আকারে চলছে। অবশ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ। বুধবার (২৪ জুন) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বেতারেও পাঠদানের কাজ চলছে। এছাড়া মোবাইল ফোনে হেল্পলাইনও (নম্বর-৩৩৩৬) খোলা হয়েছে। উক্ত হেল্পলাইনে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ ভালোমানের শিক্ষকদের কাছ থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত বিনা খরচে শ্রেণিপাঠ ও পরামর্শ নিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি পাঠানোর কর্মসূচিও নেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা যার যার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে লেখাপড়ার খোঁজ নেবেন। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও কোথাও কোথাও অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে। সবকিছুর লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখা। 

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা, অফিসের কার্যক্রম, ব্যাংকিং লেনদেনসহ সবকিছুই অনলাইনে চালাচ্ছে।বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করে আসছে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তাদের সকল প্রোগ্রাম অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্য বিদেশী এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা  পরিচালনার ব্যবস্থা  ছিল সবসময়ই। করোনাকালীন আমাদের দেশে এতদিন যাবৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় নাই- কারণ  অনেক শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ বা স্মার্ট ডিভাইস নেই। গ্রামাঞ্চলে নেই দ্রুতগতির ইন্টারনেট। এসব কিছুর সমাধানে এবার এগিয়ে আসছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি ইউজিসির জরিপে দেখা গেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোন আছে। বাকি যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনে স্মার্টফোন সরবরাহ করার চিন্তাভাবনা চলছে। আর করোনার কারণে এডিবি উচ্চশিক্ষায় অনলাইনে শিক্ষার জন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইন্টারনেট খরচ দিতে চায়। তাহলে আশা করা যাচ্ছে অনলাইনে ক্লাস শুরু করা যাবে খুব শীঘ্রই এবং সেই পথেই আমাদেরকে এগোতে হবে। কারণ করোনার এই তাণ্ডব খুব শীঘ্রই শেষ হবেনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) এক জরিপে দেখা গেছে যে ৬৫% শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে এসে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে । নানা সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই তারা তাদের লেখাপড়া চালিয়ে থাকে সব সময়। কিন্তু এবারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে করোনা। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা লকডাউনে গ্রামে চলে আসাতে তাদের একমাত্র আয়ের পথ টিউশনিও এখন হাতছাড়া। দরিদ্র পিতা-মাতার সাথে গ্রামে আছে; কিন্তু সেখানে নেই কোন কাজকর্ম, নেই কোন আয়-রোজগার। লেখাপড়া ছাড়া এভাবে কতদিন চলবে তারা ?

লেখাপড়া শেষ করে তারা চাকরি জীবনে প্রবেশ করতে চায়, চায় তাদের দরিদ্র পিতা-মাতাকে সাহায্য করতে, দেশের সেবা করতে। তাই এত অভাব সত্ত্বেও গ্রামে অবস্থানকারী প্রায় ৭০% শিক্ষার্থী অনলাইন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য যে, দেশে ৪৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এবং এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সোয়া আট লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। পক্ষান্তরে ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে আরও প্রায় পৌনে চার লাখ শিক্ষার্থী । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১০৪টি কলেজ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ হাজার ৬৯৮ জন। অধিভুক্ত নতুন সাতটি কলেজের মোট অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি (২৬৫টি) ও বেসরকারি (৫৯২টি) কলেজে অনার্স ও মাস্টার্সের ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ।

এডিবি, ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রথমেই দরকার হবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের তথ্য বা মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষা শাখায় শিক্ষার্থীদের হালনাগাদ  সকল তথ্য আছে। প্রয়োজনে নতুন করেও তৈরি করা যাবে। শিক্ষার্থীদেরকেও  খুব সততার পরিচয় দিতে হবে এ কাজে। অর্থাৎ কেবলমাত্র  ভুক্তভোগী গরীব ও গ্রামাঞ্চলে থাকা  শিক্ষার্থীরাই যেন এই সুযোগটি পায়। যাদের আর্থিক অবস্থা ভাল এবং শহরাঞ্চলে থাকে - সে যেন এই সুযোগের অপেক্ষায় না থাকে। 

আশা করছি - ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ফিরে পাবে অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হওয়ার পরিবেশ। প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় নিশ্চিন্ত হবে সবার জন্য সমান এবং অংশগ্রহণমূলক সুযোগ।

লেখক: ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার, অধ্যাপক এবং পরিচালক (আইআইটি) ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065720081329346