খাদ্য ও বাসস্থানের পর শিক্ষাই মানুষের মৌলিক অধিকার। তবে সেই অধিকার প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্ত থাকবে না বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সোপান স্পর্শ করবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অতি অল্প খরচে উচ্চশিক্ষা পাওয়ার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এই সরকারি সুযোগ পেলেও, তাঁদের আমেরিকা ও কানাডার স্বজনেরা সেই সুযোগ থেকে একপ্রকার বঞ্চিত। সেখানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ‘ফেল কড়ি মাখ তেল’ নীতি প্রচলিত। এবার সেই প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে চলেছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু এম কোমো। চলতি বাজেটে রাজ্য সরকারের অধীন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা চালুর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। প্রায় এক মিলিয়ন পরিবার এর সুযোগ নিতে পারবে। প্রথম বছরে এ খাতে বরাদ্দ ১৬৩ মিলিয়ন ডলার। অবশ্য আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণ দিয়ে গভর্নর কোমোর এ সিদ্ধান্তকে পরিমাপ করা যাবে না। এ সিদ্ধান্ত আমেরিকার মতো দেশে যুগান্তকারী এবং অবশ্য প্রশংসনীয়।
আমেরিকার গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী-প্রত্যাশী ডেমোক্র্যাট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এ বিষয়টিকে সামনে এনেছিলেন। নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর উচ্চশিক্ষা ব্যয়ের আতঙ্ক কিছুটা হলেও লাঘব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। দলের ভেতরে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনও কম-বেশি একে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু দুজনের কেউই গদিনশিন না হতে পারায় সেই প্রতিশ্রুতি অধরাই থেকে যায়। আর তাঁদের সেই প্রতিশ্রুত কাজটি করে দেখালেন অ্যান্ড্রু কোমো। সঙ্গে সঙ্গে দুই জাতীয় নেতার প্রশংসাও পেয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান সহযোগীরা যখন ওবামাকেয়ার বিলোপ করে নিম্নবিত্ত মানুষকে স্বাস্থ্যসুবিধার আওতা থেকে বাদ দিতে উদ্যোগী, তখন কোমোর এই সিদ্ধান্ত একেবারেই স্রোতের বিপরীতে চলার সাহসকে তুলে ধরে। রাজনৈতিক এই সিদ্ধান্তের সুবিধা আগামী দিনগুলোতে ডেমোক্র্যাটরা নিতে পারে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
তবে গভর্নর কোমোর এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক লাভালাভ যা-ই থাকুক না কেন অর্থাভাবে মেধাবীদের উচ্চশিক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে নিম্নবিত্তরা মুক্তি পাবে, এটাই বড় কথা। আর এ সংখ্যাটিও কম নয়, প্রায় এক মিলিয়ন। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের পথ যাতে সহজ হয়, তা-ও নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, উচ্চশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক সম্পদ সৃষ্টির জোগান দেওয়া। উদ্দেশ্য উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত সমাজসচেতন নাগরিক তৈরি, মানব-সভ্যতার জন্য নতুনতর জ্ঞান সৃষ্টি।
তবুও কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ চলেই আসে। কারণ কোমো তাঁর এই অবৈতনিক শিক্ষা প্রকল্পে কিছু বাধ্যতামূলক শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যই যদি হয় সব দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া নাগরিকের সামনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি, তাহলে এই সিদ্ধান্ত এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’