প্রশ্নপত্র ফাঁস জাতির জন্য একটি মাথাব্যথার কারণ হইয়া পড়িয়াছে। শত চেষ্টা, শত সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যাইতেছে না। এসএসসি পরীক্ষাই হউক, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাই হউক অথবা চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষাই হউক—সর্বক্ষেত্রেই কেহ না কেহ, কোনো না কোনো মহল প্রশ্নপত্র প্রকাশ করিয়া দিতেছে। এই বিষয় প্রশাসন তথা সরকার যথেষ্ট সতর্কতা গ্রহণ করিয়াছে। দুষ্টচক্র ধরাও পরিতেছে এবং শাস্তির সম্মুখীনও করা হইতেছে হামেশা। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের নিরুত্সাহিত করা যাইতেছে না। রোববার (২ জুন) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
এইসব চক্র কেবল ঢাকা শহরেই নয়, এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। পত্রিকার সংবাদ হইতে জানা গিয়াছে, শুক্রবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং অসদুপায় অবলম্বনের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হইতে ৫৩ জনকে গ্রেফতার করিয়াছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইহার মধ্যে পটুয়াখালীতেই প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের ৩৩ জনসহ ৪৬ জন ধরা পড়িয়াছে। উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল ১০টা হইতে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮-এর দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরীক্ষার এক হইতে দেড় ঘণ্টা পূর্বে ফেসবুকের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়াইয়া দেওয়া হইয়াছে বলিয়া নিরীহ পরীক্ষার্থীরা অনেকে অভিযোগ করেন। তবে পটুয়াখালীর পুলিশ পরীক্ষার পূর্বরাত্রিতেই বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালাইয়া ৩৩ জন প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করে। ইহা ছাড়া বিভিন্ন জেলায় কিছু পরীক্ষার্থীকেও গ্রেফতার করা হয়। তাহাদের মধ্যে অনেককে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দিয়াছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরিয়াই দেশের সচেতন মহল প্রশ্নপত্র ফাঁস লইয়া উদ্বিগ্ন। সরকারও যথেষ্ট টেষ্টা চালাইতেছে সন্দেহ নাই। কিন্তু রোধ করা যাইতেছে না। বিশেষ করিয়া আধুনিক প্রযুক্তি, অর্থাত্ ইন্টারনেট-অনলাইন ব্যবহার করিয়া দুষ্টচক্র ফাঁকি দিয়া চলিয়াছে। তবে আশার কথা হইল, সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও প্রযুক্তিতে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করিতেছে। ইহাও স্বীকার করিতে হইবে যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে হিড়িক পড়িয়াছিল বিগত কয়েক বছর আগে, তাহা ক্রমশ কমিয়া আসিতেছে। আমরা আশা করিব, অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিটাইয়া ফেলিতে পারিবে। তবে ইহাও সত্য, নজরদারি যত্সামান্য শিথিল হইলেই আবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের হিড়িক পড়িয়া যাইবে। দ্বিতীয়ত, আইনপ্রণেতাদেরও ভাবিয়া দেখিতে হইবে, প্রশ্নপত্র ফাঁস দমন করিতে প্রচলিত যে আইন রহিয়াছে তাহা যথেষ্ট কি না; আরো কঠোর করিবার প্রয়োজন আছে কি না।