২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। ভারতের বিপক্ষে সেটিই ছিল বাংলাদেশের সর্বশেষ জয়। কেটে গেছে ১৮টি বছর। ভারতের সঙ্গে সাত ম্যাচে জয় নেই বাংলাদেশের। দীর্ঘ অপেক্ষার ইতি টানার আরেকটি সুযোগ আজ বাংলাদেশের সামনে। কাতারের মাঠে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আজ রাত ৮টায় মুখোমুখি দুই প্রতিবেশী। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয়পর্বে সরাসরি খেলার জন্য জয়ের বিকল্প নেই দু’দলের সামনে।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
ছয় ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে ভারত গ্রুপের চতুর্থ স্থানে। তলানিতে থাকা বাংলাদেশের সমান ম্যাচে প্রাপ্তি দুই পয়েন্ট। পাঁচ পয়েন্টে তৃতীয়তে আফগানিস্তান। এই তিন দলই বিশ্বকাপ দৌড় থেকে ছিটকে গেছে। তবে সামনে রয়েছে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের তৃতীয়পর্বে সরাসরি খেলার সুযোগ। গ্রুপের তৃতীয় দলটি সরাসরি চলে যাবে তৃতীয়পর্বে। আট গ্রুপের চতুর্থ স্থান পাওয়াদের মধ্যে সেরা চার দলও সরাসরি চলে যাবে তৃতীয়পর্বে। চতুর্থ বাকি চার দল আর তলানির আট দলকে খেলতে হবে প্লে-অফ। তাই প্লে-অফ এড়ানোর প্রশ্নে আজ জয়ের বিকল্প নেই দু’দলের সামনে।
র্যাংকিং, সামর্থ্য কিংবা পরিসংখ্যান সব দিক থেকেই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ভারত। বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ১৮৪-তে থাকা বাংলাদেশের চেয়ে ৭৯ ধাপ এগিয়ে ভারত। দু’দলের ২৬ বারের সাক্ষাতে ১৩ বারই জিতেছে তারা। তিনবার জিতেছে বাংলাদেশ আর বাকি ১০ ম্যাচে ড্র। তবে সমতার এই হিসাব থেকে বাংলাদেশ খুঁজে নিচ্ছে অনুপ্রেরণা। ২০০৯ সালের পর থেকে ভারতও বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি। তিন ম্যাচই শেষ হয়েছে ড্রয়ে। আরও পরিষ্কার করে বললে বাংলাদেশ এই তিন ম্যাচে জিততে জিততে হেরে গেছে। সর্বশেষটি ২০১৯ সালে বাছাইয়ের প্রথম লেগে। কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে ৭০ হাজার দর্শকের সামনে সাদউদ্দিনের অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে ভারতীয় ডিফেন্ডার আদিল খানের শেষ মুহূর্তের লক্ষ্যভেদে জয়টা অধরা থেকে যায়।
গত কয়েক বছর ধরেই ভারতীয় ফুটবল এগিয়েছে। ২০১৯ এশিয়ান কাপের চূড়ান্তপর্বে খেলেছে তারা। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ তিন ম্যাচ সেটা বোঝাচ্ছে না। বাংলাদেশ সামনে এলেই একটা বাড়তি চাপ এসে পড়ে ভারতীয়দের মধ্যে। তাদের কাছে ক্ষয়িষ্ণু বাংলাদেশও হয়ে ওঠে সমীহ জাগানিয়া প্রতিপক্ষ। আফগানিস্তানের সঙ্গে দারুণ লড়াই করে শেষ মুহূর্তের গোলে ড্র করার পর বাংলাদেশের প্রতি সমীহটা বেড়ে গেছে ভারতীয়দের।
আফগানদের রুখে দিয়ে যেন বাংলাদেশ দল এখন এক সুখী পরিবার। প্রস্তুতির ঘাটতি, প্রীতি ম্যাচ না খেলার আক্ষেপ দূর করে এখন জামাল-তপুদের চোখেমুখে দৃঢ়তার ছাপ। সল্টলেকে মুঠোয় থাকা জয় হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ ভুলতে আজ বদ্ধপরিকর তারা। কোচ জেমি ডে অবশ্য ভারতের ভূয়সী প্রশংসা করে নিজের শিষ্যদের চাপমুক্ত রাখার পন্থা নিয়েছেন, ‘ভারত অনেক ভালো দল। সব দিক থেকেই তারা এগিয়ে। শেষ ম্যাচে আমরা ভালো খেলেছি বটে তবে সেদিনটা ভারতের জন্য ছিল নিতান্তই একটা বাজে দিন। আমি ভারতের আরেকটা বাজে দিনের প্রত্যাশা করছি মনেপ্রাণে।’ সল্টলেকের স্মরণীয় ম্যাচে অসাধারণ খেলেছিলেন অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া। ভাবনা-কথায় তাই সেই ম্যাচটা ঘুরেফিরে আসছে তার, ‘কলকাতায় ভারত শেষ মুহূর্তে গোল করে আমাদের তিন পয়েন্ট পেতে দেয়নি। সেই অতৃপ্তি নিয়েই আমরা মাঠে নামব। আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে আমরা জয়ের আত্মবিশ্বাস খুঁজে নিয়েছি। যা ভারতের বিপক্ষে কাজে লাগাতে চাই।’
কাতারের বিপক্ষে পুরো দল নিয়ে রক্ষণ সামলানো ভারতকে আজ একই কৌশলে খেলাবেন না ক্রোয়াট কোচ ইগর স্টিমাচ, সেটা বোঝাই যায়। প্রথম জয়ে চোখ রেখে ভারত খেলবে হাই প্রেসিং ফুটবল। তাদের রুখতে প্রস্তুত বাংলাদেশের পরীক্ষিত রক্ষণভাগ। ভারত হাইপ্রেসিং খেললে বাংলাদেশের জন্য তৈরি হবে গোলের সুযোগ। আগের ম্যাচে আক্রমণে উঠে গোল করেছিলেন ডিফেন্ডার তপু বর্মন। সব ম্যাচে এমনটা হবে না। তাই আজ গোলের দায়িত্বটা নিতে হবে বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ আক্রমণভাগের। কাতারের বিপক্ষে অনবদ্য নৈপুণ্য দেখানো ভারত কিপার গুরপ্রিত সিংয়ের প্রতিরোধ ভাঙতে পারলেই ১৮ বছরের আক্ষেপ ঘুচবে বাংলাদেশের।