যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন বোর্ডের হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম। গত বৃহস্পতিবার ঘটনা জানাজানির পর রোববার তিনি অফিসে আসেননি। বোর্ডে তার কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। অভিযোগ আছে, বোর্ডের হিসাব সহকারী হলেও উপশহরে দুটি আলীশান বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি এলাকায় ১০ বিঘা জমি, যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক আব্দুস সালাম।
এ দিকে দুই দিনের সরকারি ছুটি শেষে বোর্ডের টাকা লোপাটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। রোববার (১০ অক্টোবর) সকালে দুদক যশোর কার্যালয়ে গিয়ে এ অভিযোগ দাখিল করেন বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা। এরপরে বেলা ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। এখনো তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বাবু ও আশরাফুল আলমের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
তবে, বোর্ড চেয়ারম্যানের দাবি, ঘটনার সাথে জড়িতরা টাকা ফেরত দিতে যোগাযোগ করছে। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তারা টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে। এই ৯টি চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে ১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং শাহীলাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারি ছুটি থাকায় ঘটনা প্রকাশ্যে আসার দুইদিন পর রোববার বোর্ডের সচিব এ এম এইচ আলী আর রেজা দুদক কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর বেলা ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। দুদক কর্মকর্তারা সব কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন।
দুদকের যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক নাজমুস ছায়াদাতের নেতৃত্বে তদন্ত করছেন সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ও সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল। গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর পালিয়ে যান হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম। রোববার তিনি অফিসে আসেননি। বোর্ডে গিয়ে তার কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
যশোর শিক্ষা বোর্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম এরআগেও অনেক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১২ লাখ টাকার একটি দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই সময় তদবির করে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পান। এরপর আড়াই কোটির টাকা দুর্নীতির সঙ্গেও তিনি জড়িত হয়েছেন। তিনি জানান, আব্দুস সালাম দুর্নীতির মাধ্যমে উপশহরে দুটি আলীশান বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি এলাকায় ১০ বিঘা জমি, যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকানা হয়েছেন।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের একটি সূত্র জানায়, অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও তার স্বজন শহরের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকা ফেরত দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল ইসলাম বোর্ড কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তার কাছে থাকা লক্ষাধিক টাকা ফেরত দিতে চাইছেন।
বোর্ডের সচিব এ এম এইচ আলী আর রেজা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাঝে দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় রোববার আমরা দুদকে একটি অভিযোগ দিয়েছি। দুদক কর্মকর্তারা সেটি গ্রহণ করেছেন।
জানতে চাইলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ঘটনা জানাজানির পর থেকেই হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযুক্তরা টাকা ফেরত দিতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। যা হবে তা আদালতের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হবে।