অনভিপ্রেত উচ্চশিক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

অনভিপ্রেত উচ্চশিক্ষা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

তাত্ত্বিক জ্ঞান আর ব্যাবহারিক পরিশীলন মেধাবী ব্যক্তিকে বিশেষজ্ঞ হতে সাহায্য করে। চাকরিতে উন্নতি বা চাকরিপ্রাপ্তির প্রধান অবলম্বন হিসেবে যদি এমফিল-পিএইচডি-ডি.লিট ইত্যাদি মাপকাঠি হয়, তবে এসবের মাহাত্ম্য খণ্ডিত হতে বাধ্য। স্মরণার্হ যে মেধা চাষ করে বাড়ে না—শাণিত হয়, তা স্বতঃস্ফূর্ত, সহজাত। গত শতকের আগে কোনো আবিষ্কারকের ওই সব ডিগ্রি ছিল না। অবশ্য সেসবের অভিধা তখনো চিহ্নিত হয়নি। ব্যক্তির জ্ঞানের বিস্তৃতিতেই তাঁদের পাণ্ডিত্যের পরিচয় বিধৃত থাকত এবং তাতেই তাঁরা সমাদৃত হতেন। এই ফাঁকে নিজের অকৃতার্থতার কথা কিঞ্চিৎ বলে রাখি। আমি বিবিধ পথ মাড়িয়ে মানবিক বিদ্যা আহরণের শত চেষ্টার পরিণতিতে কণা পরিমাণ জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হয়ে শিক্ষকতার ব্রতে প্রবিষ্ট হই। তখন বুঝিনি। এখন বুঝছি, জগতের সর্বাপেক্ষা মহান ব্রতে আমার মতো এমন মেধাহীন ব্যক্তির আনাগোনা কী অপরাধ! সোমবার (১৯ আগস্ট) কালের কণ্ঠে পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি নিবন্ধে গোলাম কবির।

নিকট অতীতের কিছু মেধাবী শিক্ষকের পরিচয় এ প্রসঙ্গে উপস্থাপন করি। কিংবদন্তিশিক্ষক আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আবদুল হাই, মননশীল চিন্তক আবদুল হক প্রমুখ বাড়তি ডিগ্রি কাঁধে নেননি। অথচ সেসব অর্জন তাঁদের পক্ষে কঠিন ছিল না। তাঁরা জ্ঞানের নিরলস চর্চা করে গেছেন।

আমরা কাউকে খাটো করার জন্য বিষয়টি অবতারণায় প্রবৃত্ত হইনি। তবে পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, সমাজজীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন এমন কিছু বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া হচ্ছে, যা সনদের ফাইলে আবদ্ধ থাকে বা নামের শেষে অথবা প্রথমে কিছু চমক লাগানো শব্দের সংযোজনে ব্যবহৃত হয়। এগুলো কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ বা ওপরে ওঠার নিমিত্ত মাত্র। শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর আত্মজীবনী ‘আমার চলার পথে’ গ্রন্থের অক্সফোর্ড পর্বে বর্ণিত আছে, সনদের অলংকার হিসেবে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য তাঁকে প্ররোচিত করা হয়েছিল, তিনি প্রলুব্ধ হননি। এমনিতেই ইংরেজি সাহিত্যের বিপুল ভুবন পর্যবেক্ষণ ব্যক্তির পক্ষে একজীবনে বাস্তবতা পরিপন্থি। পিএইচডি ডিগ্রির জন্য ব্যক্তিসাহিত্যিক বা কালের পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজনে কিছুটা খণ্ডিত বিষয়কে অবলম্বন করা হয়, যা টর্চলাইটে সুড়ঙ্গের অন্ধকার ঘনীভূত করার মতো। তাই তিনি সাহিত্যের একটি ধারা বেছে নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনার পথ পরিক্রম করেন। তা ছাড়া জ্ঞান আহরণ তো ছকে বাঁধা হতে পারে না। প্রসঙ্গত, একটি ঘটনা বলে রাখা ভালো, জনাব সিদ্দিকীর সঙ্গে জনৈক সজ্জন ব্যক্তি ওয়াহাবি আন্দোলনের তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বাস্তব জীবনে তাঁকে ওয়াহাবি অনুসারীদের একটি অংশের মানুষ নেতা হিসেবে সম্মান করলেও তিনি সেই বৃত্তবদ্ধ ছিলেন না। ফলে অর্জিত ডিগ্রি ফলপ্রসূ হয়নি। আজকের উচ্চতর ডিগ্রি কী পরিমাণ ভয়াবহ, তা সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কথাবদ্ধ সম্ভব নয়। এখনকার উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের অনেকে একটিমাত্র গরুর রচনা আয়ত্তকারীদের মতো। ফাঁকফোকর পেলে নিম্নগামীজনের মতো সেদিকেই প্রবাহিত হয়। এ যেন ডস্টর ডোস্কির আদুরী গল্পের নায়িকার মতো। ঘেরাটোপ থেকে বেরোতে পারে না।

এখন ডক্টরেট ডিগ্রি বিক্রির কারখানা গড়ে উঠেছে। অনেক গড় মেধাসর্বস্ব ব্যক্তি তা সহজেই কিনতে পারছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার নানা কারণ বিদ্যমান। কিছু ব্যক্তির মেধার সংকীর্ণতার কারণে মাস্টার্স পর্যন্ত ভালো ফল না থাকায় কোথাও ভালো কর্মসংস্থান হয়নি। যেনতেন প্রকারে বড় ওজনের ডিগ্রি পিএইচডি করায়ত্ত করেছে। সেই সুবাদে বা পদপ্রক্ষালনের গৌরবে বিশুদ্ধ জ্ঞানদান প্রতিষ্ঠানে প্রবিষ্ট হয়েছে। তাদের অনেকেই মেধাহীনরা যেসব ভুল করে তার আবর্তেই ঘুরপাক খায়।

শিক্ষা ছাড়া চাকরির অন্যান্য ক্ষেত্রে ডিগ্রিধারীদের বাড়তি জ্ঞান প্রয়োগের সুযোগ কম। তবু কিছু মেধাবী ব্যক্তি তা অর্জন করছেন চাকরিক্ষেত্রে উন্নতি বা অন্যবিধ ভাবনা সামনে রেখে। প্রবল যোগ্যতাসম্পন্ন হয়েও অকার্যকর হয়ে থাকে গবেষণার বিষয়ের ফল।

আমরা অনেককে চিনি, যাঁরা অসাধারণ মেধাবী। চাকরিকালীন তাঁদের কেউ কেউ ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হয়েও অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি করে এসেছিলেন বিদেশ থেকে। কর্মজীবনে যাঁরা কোনো প্রয়োগের সুযোগ পাননি। তাহলে এত সব উচ্চতর ডিগ্রি বগলদাবা করার উদ্দেশ্য কি চাকরিপ্রাপ্তি বা পদোন্নতি! আমরা মনে করি এত সব অনভিপ্রেত ডিগ্রির চেয়ে জাতীয় কাজে সত্যিকার মেধাবীদের বেছে নেওয়া দরকার। আর উচ্চশিক্ষা বা উচ্চতর ডিগ্রির শনৈঃ শনৈঃ ক্রমবৃদ্ধির পরিসংখ্যান দেখিয়ে চোখ জ্ঞানের গভীরে প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত করতে না পারলে জাতির মানসিক উন্নতি কাগুজেই থেকে যাবে। পিএইচডির তাবিজ ধুয়ে খেলেও জ্ঞানের দীনতা ঘুচবে না।

লেখক : সাবেক শিক্ষক, রাজশাহী কলেজ।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037980079650879