রাজশাহীর শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক নির্যাতন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষ, হত্যা ও আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২০১৯। এবার বছরজুড়ে আন্দোলন, মিছিল ও বিক্ষোভে উত্তপ্ত ছিল রাজশাহীর শিক্ষাঙ্গন।
গত ২ নভেম্বর দুপুরে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিউদ্দিন আহম্মেদকে পুকুরে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে সাত জনের নাম উল্লেখ করে ৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষ। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুরুতর আহত অবস্থায় ১১ জন শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই সঙ্গে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিপ্লোমা কোর্সের অবশিষ্ট মৌখিক পরীক্ষাসমূহ এবং বিএসসিসহ ডিপ্লোমা কোর্সের সকল বর্ষের ক্লাসসমূহ স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষার্থী হত্যা
রাজশাহীতে সারাবছরে পাঁচ জন শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। ২৪ নভেম্বর গোদাগাড়ীতে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে মো. শান্ত নামে এক কলেজছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় চারজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
১৩ নভেম্বর নগরীর পবা নতুনপাড়া এলাকায় ছুরিকাঘাতে আবদুল্লাহ আল ফাহিম (১৮) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হন। তিনি মহানগরীর বরেন্দ্র কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনার পরে সৈকত নামের একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২৬ সেপ্টেম্বর নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় স্কুলছাত্র ইমন হোসেনকে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। চার আসামি হলেন- ইমনের সহপাঠী হৃদয়, ইমন, অন্তর ও হানিফ।
গত ৬ আগস্ট রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন আশারিয়া রাব্বিকে ছুরিকাঘাতে করে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে যুবলীগ কর্মী মো. রনকের নামে। এ ঘটনায় ওই যুবলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
১৬ মে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সরমংলা খাড়ির (জলাশয়) পাশের একটি গাছ থেকে এক কিশোরের (১৮) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে স্থানীয় একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল বলে পরিবার দাবি করে।
আত্মহত্যা
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে আত্মহত্যাকারী ২ জন শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২৯ জুন নগরীর দেবিশিং পাড়ার এসএস ছাত্রাবাস থেকে এজাজ আহমেদ আকিবের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
১০ এপ্রিল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ইব্রাহিম হোসেন (১৮) নামে আরেক এইচএসসি পরীক্ষার্থী আত্মহত্যা করে।
২৩ এপ্রিল রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় আত্মহত্যা করে স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। এ নিয়ে মামলা চলছে আদালতে।
এছাড়া বেশ কিছু আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সড়ক দুর্ঘটনা ও পানিতে ডুবে এ বছর ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহীর পুঠিয়ায় ট্রাকচাপায় সিরাজুল হক নামে এক কলেজশিক্ষক নিহত হন। তিনি ইসলামী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ছিলেন।
৯ জুলাই পবা উপজেলায় ট্রাকচাপায় আবদুল হালিম (৩২) নামে এক স্কুলশিক্ষক নিহত হন। হালিম পবা উপজেলার কশবা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
১১ই নভেম্বর দুর্গাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা আলতাফ হোসেনের (২০) মৃত্যু হয়।
১৪ অক্টোবর দুর্গাপুর উপজেলায় মাহেন্দ্রার (থ্রি হুইলার) ধাক্কায় সোহেল ইসলাম (৯) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়।
৮ই সেপ্টেম্বর বাগমারায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ভটভটি উল্টে আসাদুজ্জামান আসাদ (১৭) নামে এক মাদরাসাছাত্র নিহত হয়।
২০ জুলাই চারঘাটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মীম খাতুন (৮) নামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
২৩ জুন বাঘায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মিজানুর রহমান নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। সে চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।
২ মে নগরের বর্ণালির মোড়ে ট্রেনে কাটা পরে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়।
২০ মার্চ গোদাগাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় সাদিয়া আক্তার নামে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়।
এছাড়া, ২১ এপ্রিল বাঘায় পদ্মা নদীতে গোসল করতে নেমে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ ভানুকর গ্রামের জিল্লুর রহমানের মেয়ে ইশা (১০) ও জিম (১৭) এবং জিল্লুরের চাচাতো ভাই শহীদুল ইসলামের মেয়ে শিপ্রা (১২)। এর মধ্যে জিম মীরগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী, শিপ্রা মীরগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও এশা খাতুন বাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।