রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদউদ্দিন আহম্মেদকে জোর করে টেনে হিঁচড়ে পুকুরে ফেলে দেয়ায় ৫০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে ইন্সটিটিউটের অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীরা তাকে পুকুরে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করেছেন শিক্ষকরা। পরে রাত ৯ টায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাসহ মোট ৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন অধ্যক্ষ ফরিদউদ্দিন আহম্মেদ।
এছাড়া রোববারের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা না হলে লাগাতার কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানান শিক্ষকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্সটিটিউটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দিলো ছাত্রলীগ (ভিডিও)
মামলায় আসামিরা হলেন, কম্পিউটার বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও ইন্সটিটিউটের ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভ, ইলেকট্রোনিক্স ৫ম পর্বের শিক্ষার্থী মুরাদ, পাওয়ার বিভাগের সাবেক ছাত্র শান্ত, ইলেকট্রোনিক্স বিভাগের সাবেক ছাত্র বনি, মেকাটনিক্স বিভাগের সাবেক ছাত্র হাসিবুল ইসলাম শান্ত, ইলেক্টো-মেডিক্যাল বিভাগের সাবেক ছাত্র সালমান টনি, একই বিভাগের ৭ম পর্বের ছাত্র হাবিবুল ও কম্পিউটার বিভাগের সাবেক ছাত্র মারুফ।
শিক্ষকরা আরও জানান, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাদের কয়েকজনের মুখ রুমাল দিয়ে বাধা ছিলো। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সব সেমিস্টারের ফরম পূরণ চলছে। ছয় মাসের একটি করে সেমিস্টারের কোর্স হয়। ছয় মাসের মধ্যে এক দিনেও ক্লাসে আসেনি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫০ জন। এই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণের জন্য জানালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদউদ্দিন আহম্মেদ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নিয়ে আসতে বলেন। এরপরে কিছু শিক্ষার্থী অভিভাবক এনে ফরম পূরণ করেছে। আর বেশ কিছু শিক্ষার্থী তাদের মধ্যে ছাত্রলীগ রয়েছে তারা অভিভাবক নিয়ে আসেনি। তারা অভিভাবক ছাড়াই ফরম পূরণ করতে চায়। এছাড়া শনিবার ফরম পূরণের শেষ সময় ছিলো। তবে জরিমানাসহ আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে।
জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে ছাত্রলীগের নেতা সৌরভসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে। এসময় সৌরভ অধ্যক্ষকে ফরম পূরণের প্রস্তাব দেয়। এতে অধ্যক্ষ সৌরভকে জানায়, অভিভাবক নিয়ে আসতে হবে। পরে তারা অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে চলে আসে। দুপুরের নামাজ শেষে অধ্যক্ষ অফিসে আসছিলেন। এসময় সৌরভসহ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জোর করে অধ্যক্ষকে দুই হাত ধরে ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত পুকুরের পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এসময় তিন জনের মুখ রুমাল দিয়ে বাঁধা ছিল। পরে শিক্ষকরা দ্রুত পানি থেকে তুলে অধ্যক্ষকে অফিস কক্ষে নিয়ে আসেন।
অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, তারা কথিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তারা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা নেয়। এই ধরনের অনেক অভিযোগ আসে তার কাছে। শিক্ষার্থীরা টাকা না দিলে তাদের মারধরের হুমকি দেয়। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন নিয়ম-কানুন তোয়াক্কা করে না। ক্লাস করে না, পরীক্ষা দেয় না। ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে বিভিন্ন মিছিল-মিটিং এ নিয়ে যায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগের সভাপতি মেহদী হাসান রিগান ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রহমান ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নবীন-বরণের নামে শিক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা উত্তোলন করে। তারা প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীর থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা নেয়। কিন্তু আজো হয়নি নবীন-বরণ। এনিয়ে অধ্যক্ষ বাধা দিলে ছাত্রলীগের নেতারা হুমকি দেয়।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি সেইখানে শুধুমাত্র ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভ ছিলো। এর বাইরে ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী ছিলো না। অন্য যারা ছিলো সবাই সাধারণ শিক্ষার্থী। তারপরও আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছি যারাই এই ঘটনার সাথে যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই ঘটনার সময় তিনি ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন এই নেতা।
নগরীর চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. গোলাম মোস্তফা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাসহ মোট ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এই মামলায় অধ্যক্ষ নিজেই বাদি।