কুড়িগ্রামের রৌমারীতে শৌলমারী মতিয়ার রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে বসা কনিষ্ঠ শিক্ষক আহমেদ হোসেনকে শোকজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকেও শোকজ করা হয়।
এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী।প্রধান শিক্ষক আলী আকবর। অভিযোগে প্রেক্ষিতে গত ৩ আগস্ট দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বে সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচরে বসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শামছুল আলমের স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো চিঠি অধ্যক্ষের চেয়ারে বসা কনিষ্ঠ শিক্ষক আহমেদ হোসেন ও গভর্নিং বডির সভাপতিকে পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, শৌলমারী মতিয়ার রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে কনিষ্ঠ শিক্ষক আহমেদ হোসেনকে দেয়া হয়েছে। অভিযোগের আলোকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তদন্ত করেন। পরে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায় যে, শিক্ষা মন্ত্রণালেেয়র নির্দেশনা অবজ্ঞা করে সহকারী প্রধান শিক্ষককে বাদ দিয়ে একজন কনিষ্ঠ শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যা বিধি সম্মত হয়নি। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের যিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু সহকারী প্রধান শিক্ষক আলী আকবরকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক না করে কনিষ্ঠ শিক্ষক আহমেদ হোসেনকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয় পরিচালনা কমিটি। এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কেন ভেঙে দেয়ার হবে না-তার জবাব আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাত্র সভাপতিকে বলা হয়েছে।
একই চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও আপনি কেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তার সন্তোষজনক জবাব তিন কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে কনিষ্ঠ শিক্ষক আহমেদ হোসেনকে। অন্যথায় বেতনভাতা বন্ধের জন্য ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।
কারণ দর্শানোর চিঠির বিষয় মুঠোফোনে জানতে চাইলে শৌলমারী মতিয়ার রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আহমেদ হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শোকজের একটি পত্র হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে সঠিক মতামতসহ জবাব পত্র পাঠানো হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, গভর্নিং বডি আমাকে যোগ্য মনে করেছে ও বিদ্যালয়ের বৃহত্তরস্বার্থে প্রধানের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। আমি আমার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করব।
এ প্রসঙ্গে শৌলমারী মতিয়ার রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, জেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠি অনুুযায়ী জবাব পত্র দেয়া হবে বলে জানান।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) মো. শামছুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ও বিধি অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদটিতে সহকারী প্রধানকে দায়িত্ব দেয়ার কথা থাকলেও তা না করে কনিষ্ঠ শিক্ষকে দায়িত্ব দেয়ায় গভর্নিং বডি এবং ওই শিক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। যা তিন কর্মদিবসে জবাবপত্র চেয়ে তাদের কাছে কারণ দর্শানো চিঠি দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শৌলমারী মতিয়ার রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম চলতি বছর ৩১ জুলাই অবসর গ্রহণ করেছেন। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে কিংবা প্রধান শিক্ষক কোনও কারণে অনুপস্থিত থাকলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন।
কিন্তু বিদ্যালয়টিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকার পরও গভর্নিং বডি সরকারি পরিপত্রের তোয়াক্কা না করে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে গত ১ আগস্ট বিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।