অধ্যক্ষ ও সাবেক সভাপতির সার্টিফিকেট জালিয়াতির তদন্ত শুরু - দৈনিকশিক্ষা

অধ্যক্ষ ও সাবেক সভাপতির সার্টিফিকেট জালিয়াতির তদন্ত শুরু

আমতলী প্রতিনিধি |

বরগুনার আমতলী উপজেলার বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের জাল সার্টিফিকেটধারী অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া ও সাবেক সভাপতি মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনার ডিগ্রী পাসের সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র পরিচালক ড. অলক কুমার সাহা আগামী মঙ্গলবার বিষয়টি তদন্তে কলেজে আসবেন। 

কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা কলেজে সরেজমিনে পরিদর্শনে আসারা চিঠিতে সাবেক সভাপতি ও অধ্যক্ষের সনদ যাচাই বাছায়ের বিষয়টি বাদ দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তার এমন চিঠিতে নিয়ে ‘ধুম্রজাল’ সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠির নির্দেশনা অনুসারে অভিযোগটি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। অভিযোগ ওঠেছে আগে পদত্যাগ করা জাল সার্টিফিকেটধারী অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়া তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।


জানা গেছে, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মো. ফোরকান মিয়া বিএ (পাস) জাল সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকরি নেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের তিনি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। অধ্যক্ষ পদে আসীন হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে দুর্নীতি, অর্থআত্মসাৎ ও সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। সাময়িক বরখাস্তের পরেই ডিগ্রি পাসের জাল সার্টিফিকেটের তথ্য বেরিয়ে আসে।  সার্টিফিকেট জালিয়াতি ফাঁসের তথ্য বেরিয়ে আসলে তিনি স্বেচ্ছায় কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের ৮ বছর পরে এ বছর ৮ জুলাই ফরোয়াডিং জালিয়াতি করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফোরকান মিয়া অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মোসা. মাকসুদা আক্তার জোসনার নাম প্রস্তাব করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য যাচাই বাছাই না করেই বরগুনা জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে মোসা. মাকসুদা আক্তার জোসনাকে সভাপতি করে  অ্যাডহক কমিটি দেয়। ওই অ্যাডহক কমিটি অবৈধভাবে মো. ফোরকান মিয়াকে কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন। ওই কমিটির মেয়াদ গত ১৫ আগস্ট শেষ হয়।  কমিটির মেয়াদ শেষে ফোরকান মিয়া পুনরায় অ্যাডহক কমিটির জন্য মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনাকে সভাপতি চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনার বিএসএস পাসের সার্টিফিকেট (রোল নং-৭০২৯৭০, রেজি নং-০৯৬৬৩৫৫ এবং পাসের সন-২০০৪) যাচাই করেন। তার সার্টিফিকেট যাচাই করে সঠিক পাওয়া যায়নি বলে কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা তার এক চিঠিতে উল্লেখ করেন। 

এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া ও সভাপতি মাকসুদা আক্তার জোসনার সনদ যাচাই ও কলেজের সার্বিক বিষয় তদন্ত করতে কমিটি গঠন করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষের সার্টিফিকেট যাচাই এবং কলেজের সার্বিক অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. অলক কুমার সাহাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।  ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাকসুদা আক্তার জোসনার বিএসএস পাসের সনদটি সঠিক পাওয়া যায়নি। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কর্মকর্তা ও বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. অলক কুমার সাহা ৫ অক্টোবর সরেজমিনে কলেজ পরিদর্শনে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে সাবেক সভাপতি মোসাঃ মাকসুদা আক্তার জোসনা ও অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়ার সনদ যাচাই বাছায়ের বিষয়টি উল্লেখ না করে কলেজের প্রশাসনিক, একাডেমিক,  অবকাঠোমো ও আর্থিক তদন্তের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। 

অভিযোগ উঠেছে, তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মোঃ ফোরকান মিয়ার অপচেষ্টার ধারাবাহিকতায় তদন্ত কর্মকর্তার চিঠিতে সভাপতি ও অধ্যক্ষের সার্টিফিকেট জালিয়াতির বিষয়টি উল্লেখ নেই।  

এদিকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বকুলনেছা মহিলা কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয়। সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক রাকিবুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়া চাকরি নেওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসুকৃত ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের বিএ পাসের সার্টিফিকেট জমা দেন। ওই সার্টিফিকেটটি জাল। সাটিফিকেটের বিষয়ে আদালতে মামলা হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সনদটি অস্বীকার করে প্রিমিয়িাম ইউনিভার্সিটির একটি বিএ পাসের সনদ আদালতে প্রদর্শন করেন। যাচাই বাছাই শেষে ওই সনদও জাল বলে তারা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।  একই সালে প্রতিবেদনে তারা আরও উল্লেখ করেছেন যেহেতু তার সনদ জাল সেহেতু তার নিয়োগ বিধিসম্মত নয়।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আগে পদত্যাগ করা অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়ার বিএ পাসের সনদ জাল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিতে ওই জালসনদের তদন্তের নির্দেশ থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা ও বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র পরিচালক ড. অলক কুমার সাহা চিঠিতে তার সার্টিফিকেট যাচাইয়ের কথা উল্লেখ করেনি। তদন্ত কর্মকর্তার এমন চিঠিতে আমি হতবাক। এতে জাল সনদধারী ফোরকানের সনদের তদন্ত এড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠির মর্মানুসারে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

জাল সার্টিফিকেটধারী পদত্যাগী অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়া তদন্ত কাজে প্রবাহিত করার কথা অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কলেজের সব শিক্ষক কর্মচারীর সাটিফিকেটসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করতে পরিচালক চিঠি দিয়েছেন।

বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. অলক কুমার সাহা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রানুসারে তদন্ত করবো। আগামীকালই আমার দেওয়া চিঠি সংশোধন করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046601295471191