জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাবেক সদস্য ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যকার রতন সিদ্দিকীর (ড. মিয়া ইনামুল হক) বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় এই অধ্যাপক এবং তার গাড়িচালককে লাঞ্ছিত করা হয়। এ নিয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
রতন সিদ্দিকী বাসায় ‘ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী’ হামলা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান দুপুরে জানান, অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর বাসায় আক্রমণ হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ওনার বাসায় আসি এবং এখন পর্যন্ত অবস্থান করছি। রতন সিদ্দিকী ভালো আছেন। মুসল্লিদের দু-একজন তাকে ধাক্কা দিয়েছেন।
অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর মেয়ে পূর্ণাভা হক সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় কয়েকশো মানুষ আমাদের বাড়ির গেটে হামলা করে, গেট ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। আমার বাবা ও তার গাড়িচালকের গায়ে হাত তোলে। এ সময় আমার মা ও বাড়ির কেয়ারটেকারকেও গালিগালাজ করে।
হামলার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, একটি চক্র বাসার গেটের সামনে নিয়মিত বাজার বসায়, গেটের সামনে সবজির ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে। এসব কারণে আমরা বাড়িতে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারি না। গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছিল না। গেটের সামনে একটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল, বাবা মোটরসাইকেলটি সরাতে বলেন। তারা বলেন, সরাবেন না। এরপর হঠাৎ করেই নাস্তিক নাস্তিক বলে চিৎকার করে বাসার গেটে হামলা শুরু করে।
জানা গেছে, রতন সিদ্দিকীর বাসার পাশের মসজিদে জুমার নামাজের সময় গেটের সামনে বাইক রাখা হয়। তখন রতন সিদ্দিকী গাড়ি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করতে গিয়ে বাইক সরাতে বললে গেটের সামনে বাইক রাখাকে কেন্দ্র করে একজনের সাথে কথা-কাটাকাটি হয়। নামাজের পর ৪০-৫০ জন মুসল্লি একসঙ্গে তার বাড়িতে হামলা চালায় এবং রতন সিদ্দিকীর গায়ে ধাক্কা দেয়। তখন রতন সিদ্দিকীর স্ত্রী সামনে আসলে তাকেও মারতে উদ্যত হয়।
ড. রতন সিদ্দিকী (ড. মিয়া ইনামুল হক) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলার অধ্যাপক তিনি। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ এ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। নাটকে অবদান রাখায় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন। তার স্ত্রী ফাহমিদা হক কলিও একজন লেখক ও নাট্যব্যক্তিত্ব।