যে পদ্ধতিতে অনলাইনে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ডাটা খরচ দেবে সরকার - দৈনিকশিক্ষা

যে পদ্ধতিতে অনলাইনে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ডাটা খরচ দেবে সরকার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়টায় শিক্ষার্থীরা যাতে ঘরে বসে অনলাইনে পড়াশোনা করতে পারে সেজন্য তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারে যে খরচ হবে- তা সরকারই দিয়ে দেবে, জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। 

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেছেন, “অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান পৌঁছে দিতে শিক্ষার্থীর যে ‘ডাটা কস্ট’ - সেটা আমরা্ সাবসিডাইজ করার কথা ভাবছি।”

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দশদিনের মাথায় মার্চের মাঝামাঝি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী স্কুলের বন্ধ কয়েক দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। সেই থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীরা যাতে ঘরে বসে অনলাইনে পড়াশোনা করতে পারে সেজন্য সরকারিভাবে অনলাইনে শিক্ষার খরচ পরিশোধ করা, শ্রেণিকক্ষে কয়েক ভাগে শিক্ষার্থীদের পাঠদান - এরকম নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, “শিক্ষার্থীর যে ডাটা কস্ট সেটা সাবসিডাইজ করার জন্য যেমন ধরুন আমরা একটা সরকারি ওয়েবসাইট করলাম। সেখানে ক্লাসের পড়া রেকর্ডেড থাকবে। যার কাছে একটা স্মার্ট ডিভাইস থাকবে সে তার সময়মতো ক্লাস করে নিতে পারবে।”

“মোবাইল কোম্পানিগুলো আমাদের বলবে এই সাইটের জন্য কত টাকা ডাটা কস্ট এসেছে। সেটা সরকার পরিশোধ করে দেবে।”

তিনি বলছেন, স্কুল পর্যায়ে সব শিক্ষার্থীকে একসাথে ক্লাস না করিয়ে কয়েক ভাগে ভাগ করে ক্লাস নেয়া সেরকম পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করছে।

“এটা হতে পারে এক সপ্তাহে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্লাস করবে। পরের সপ্তাহে অন্যরা।”

তবে করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে যে কার্যক্রমই নেয়া হবে তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ীই হবে, বলছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।

স্কুল খোলার পর যেভাবে এগোতে চান একজন শিক্ষক

বাংলাদেশে শহরের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে পাঠদান চলছে। টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও সরকারের তরফ থেকে পাঠদানের চেষ্টা রয়েছে।

তবে দেশে সরকারি হিসেবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যে চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের সবার পরিবার স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য রাখে না।

বিশেষ করে মহামারির কারণে যেভাবে মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে বা কমে গেছে তাতে অনেকের ক্রয়ক্ষমতাও কমে গেছে।

অন্যদিকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে বহু পরিবারে টেলিভিশন পর্যন্ত নেই, - বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

কথা হচ্ছিল এরকমই একটি এলাকা কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক এশতেয়ারা রুমার সাথে।

তিনি বলছেন, স্কুল খোলার পরপর তাদের হাতে একটি শ্রেণিতে যত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে তার সবকিছু পড়িয়ে শেষ করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলছেন, “শুরুতে প্রতিটা ক্লাসে কিছু বেসিক জিনিস থাকে যেমন প্রথম শ্রেণিতে বর্ণ শেখা ও লিখতে পারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দ্বিতীয় শ্রেণিতে শব্দ শেখা, যুক্তবর্ণ ও বাক্য গঠন, তৃতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সাবলীলভাবে রিডিং পড়তে পারবে। যে শ্রেণিতে যে বেসিক বিষয়, সেগুলোর উপরেই স্কুল খোলার পর আমি জোর দেবো।"

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনি্ও গুতেরেস আজ বলেছেন করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে তা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম।

শিক্ষায় এখন যে সংকট চলছে তা যাতে বিপর্যয়ে রূপ না নেয় সে ব্যাপারে আজ বিশ্বের সকল সরকারকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, শিক্ষায় গত কয়েক দশকে যে অগ্রগতি হয়েছে তা মুছে যাচ্ছে এই কয়েক মাসেই।

শিক্ষায় অর্থ বরাদ্দ বিশ্বব্যাপী ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করছিলেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ গণসাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধুরী।

তিনি বলছিলেন, “সরকারের সদিচ্ছার একটা বহিঃপ্রকাশ আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে। সেটি কিন্তু হয়নি। উল্টো বরং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম এটি প্রত্যাহার করা হবে কিন্তু তা করা হয়নি।”

“সরকার ডাটা চার্জ দিয়ে দেবে সেটা খুবই ভালো কথা, কিন্তু যে খরচ বেড়েছে সেটা প্রত্যাহার প্রয়োজন।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে দেশে ৯৬ শতাংশ পরিবারে মোবাইল ফোন রয়েছে যার বড় অংশই ফিচার ফোন। যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্ভব এবং তাতে রেডিও রয়েছে।

সেগুলোর দাম কমানো অথবা সরকারিভাবে বিলি করার কথা বলছেন রাশেদা কে চৌধুরী যাতে করে সেখানে সরকারিভাবে বার্তা পাঠিয়ে এবং রেডিওর মাধ্যমে পাঠদান সম্ভব হয়।

তিনি বলছেন, “সরকার অনেক বার্তা পাঠায় যেমন টিকা দিন, করোনার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। এরকম বার্তা পাঠাতে পারে সরকার। টিভিতে যে পাঠদান হচ্ছে, রেডিওতে সেই একই জিনিস সম্প্রচার হলে এই যে এত লোকের হাতে ফিচার ফোন তারা তাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনায় সেটা কাজে লাগাতে পারবে। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে।”

তিনি আরও বলছেন, “শিশুরা এখন পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাসহ নানা ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। সরকারের উচিত উপবৃত্তির তালিকাটা বাড়ানো। এক পরিবারের দুটি শিশুকে যদি উপবৃত্তি দেয়া হয়ে থাকে, তাদের যদি আর একটি সন্তান তাকেও এর আওতায় আনা অতি প্রয়োজন। খেতে না পারলে লেখাপড়া হবে না।”

সূত্র: বিবিসি

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040688514709473